গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশের বিশিষ্ট ইসলামি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সারাদেশের বিভিন্ন শহরে নাস্তিক্যবাদী লেখক-ব্লগার ও নাস্তিক্যবাদী ব্লগ-ম্যাগাজিনগুলো চিরতরে বন্ধ ও তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। দেশের কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কথিত ধর্মবিদ্রোহী কার্যক্রম এবং বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এই সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
এসকল সমাবেশে অসংখ্য হেফাজত নেতাকর্মীরা ছাড়াও যোগ দেন বিভিন্ন মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক ও অন্যান্য ইসলামি দলের নেতাকর্মী। তাঁরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সকল নাস্তিকদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। প্রতিবাদকারীরা ধর্মীয় অনুভূতিকে অসম্মান করার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় এবং ধর্মবিদ্রোহ আইন কার্যকর করার আহ্বান জানায়।
নাস্তিক বিরোধী স্লোগানে দেশজুড়ে সারাদিন বিভিন্ন এলাকা মুখরিত করে রাখেন হেফাজত কর্মীরা। আমাদের সংবাদকর্মী প্রতিনিধিরা এই বিক্ষোভ সমাবেশের বিষয়ে জানতে কথা বলেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত হওয়া হেফাজতের সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়া নেতাকর্মীদের সাথে।
আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকার সেক্রেটারি হযরত মাওলানা মামুনুল ইসলাম এর সাথে। তিনি জানান, “এই সমাবেশগুলি আমাদের সরকার এবং বিশ্বের কাছে একটি বার্তা যে বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী এজেন্ডার দ্বারা এদেশের কুলাঙ্গার নাস্তিক লেখকরা আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে ক্ষয় করার যে অপচেষ্টা এতদিন ধরে করে আসছে তা আর হতে দেওয়া হবেনা। বাংলাদেশ মুসলমানদের মাটি, এখানে নাস্তিকদের কোন জায়গা নাই। ধর্মে অবিশ্বাস যারা করে তাদের জায়গা জাহান্নামে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশের কতিপয় নাস্তিক লেখকরা বিভিন্নভাবে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে যাচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু ব্লগার ও লেখক যেমন- মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নাদিয়া ইসলাম, শাহরিয়ার কবির, এমডি মিজানুর রহমান, আসিফ মহিউদ্দিন, মুনাওয়ারা মুবাশিরিন, বাবুল পাল, আরিফুল ইসলাম প্রান্ত, সুব্রত শুভ, আরিফ জেবতিক, রেহানা আক্তার, সুষুপ্ত পাঠক, সৈয়দা মহসিনা ডালিয়া, আসাদ নুর, সুমিত রায়, মারুফুর রহমান খান, নাফিউর রেজওয়ান, অমিত সিনহা -এরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ম্যাগাজিনে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের নামে নানা ধরনের কুৎসা প্রকাশ করছে। ইসলাম বিরোধী সকল অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে দমন করার সময় এসেছে। এই নতুন বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছে আমরা আহবান জানাচ্ছি ধর্মবিদ্রোহ আইন প্রণয়ন করে এই নাস্তিক কুলাঙ্গারদের কঠোর শাস্তি দিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার। ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করবে আর আমরা নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে থাকব, তা হবে না৷ আমরা ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার জন্য পদক্ষেপ এবং পরিবর্তনের দাবি করছি৷”
আমাদের খুলনা প্রতিনিধি কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের খুলনা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়া-এর সাথে। তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় ধর্মের প্রতি কোন ধরনের অসম্মান আমরা সহ্য করবো না। যারা ইসলাম এবং আমাদের নবীকে অপমানিত করে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে, কঠোর শাস্তি পেতে হবে যাতে সমাজে শান্তি বজায় থাকে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি সকল ধরনের ধর্ম-বিরোধী ওয়েবসাইট, ব্লগ ও ম্যাগাজিনগুলোতে চিরতরে ব্যান করে তাদের প্রত্যেককে কঠোরতম শাস্তি প্রদান করতে হবে।”
আমাদের সিলেট প্রতিনিধি সিলেট বিভাগের হেফাজতে ইসলামের আমির মুফতি মাওলানা রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী’র সাথে বিক্ষোভ সমাবেশের বিষয়বস্তু নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে নাস্তিক-মুরতাদের দ্বারা যে ক্রমবর্ধমান অসম্মান ও অনৈতিকতার অনুপ্রবেশ ঘটছে তা থেকে আমাদের পবিত্র ধর্মকে রক্ষা করতে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। ইসলামের শিক্ষাকে সমুন্নত রাখা এবং নাস্তিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের শক্তির প্রতিটি আউন্স দিয়ে আমরা এই নাস্তিকদের প্রতিহত করতে সদা প্রস্তুত। এটা ৩৬০ আউলিয়ার দেশ, এখানে নাস্তিকদের জন্য কোনও স্থান নেই। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহবান জানাচ্ছি তাঁরা যেন দ্রুত সমাজের এই নাস্তিক কীট গুলোকে কঠিন শাস্তি দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ কে একটি সোনার দেশ হিসেবে গোড়ে তুলেন। দেশে ইসলামের নীতি স্থাপন করতে হবে, এটা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।”
এদিকে আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি কথা বলেন হাঠহাজারী উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক এমরান শিকদার -এর সাথে। তিনি বলেন, “একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে এই নাস্তিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আমাদের সকলের কর্তব্য মনে করি। এই নাস্তিকরা আমাদের ইসলাম সম্প্রদায়কে হুমকি দিচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের বিশ্বাস রক্ষা করতে হবে। দ্রুত এই নাস্তিক ব্লগার, লেখক ও নাস্তিক্যবাদী ওয়েবসাইট, ম্যাগাজিন ও সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে শক্তভাবে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।”
আমাদের সংবাদ প্রতিনিধিরা জানান সমাবেশগুলো থেকে কোনও ধরনের সংঘর্ষ কিংবা হতাহতের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সকল অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মোতায়েন ছিল।
ইসলামী বিষয়গুলোতে তার রক্ষণশীল অবস্থানের জন্য পরিচিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সবসময় নাস্তিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে এবং তাদের বিরোধিতায় সক্রিয় থেকেছে, নাস্তিকতাকে তারা বাংলাদেশের ধর্মীয় মূল্যবোধের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন। এই গোষ্ঠীর নেতারা সমাজে নাস্তিকতার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সমাজে ইসলামী ঐতিহ্য ও নৈতিক মূল্যবোধ প্রচার ও রক্ষার গুরুত্ব জোর দিয়ে বলে থাকেন। সমাবেশগুলোয় হেফাজতে ইসলামের নেতারা নাস্তিকতার বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাদের দাবি পূরণ না হলে আরও পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।