মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তৃতীয় ও সর্বশেষ প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ৯টায় (বাংলাদেশি সময় সোমবার সকাল ৭টায়) নেভেদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাসের নেভেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিতর্ক শুরু হয়।
৯০ মিনিটের এ বিতর্কে সঞ্চালকের ভূমিকায় আছেন ফক্স নিউজ চ্যানেলের ক্রিস ওয়ালেস। দুই প্রার্থী নিজেদের নীতিগত অবস্থান থেকেই সম্ভাব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের নীতিগত অবস্থান নিজ দেশের সামনে তুলে ধরছেন।প্রথম বিতর্কের মতোই ট্রাম্পকে মোকাবিলার জন্য হিলারি জোরালো প্রস্তুতি অব্যাহত রাখলেও রিপাবলিকান প্রার্থী বিভিন্ন সমাবেশে ভোটারদের সঙ্গেই বেশি সময় কাটিয়েছেন। আগের দুটি বিতর্কের পর জরিপ অনুযায়ী ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে ছিলেন হিলারি।
বিতর্ক শুরুর আগে মার্কিন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিতর্কে দুই প্রার্থী সঞ্চালক ওয়ালেসের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ঋণ ও অধিকার বিষয়ক ইস্যু (এনটাইটেলমেন্ট), অভিবাসন, অর্থনীতি, সুপ্রিম কোর্ট, বৈদেশিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছাড়াও একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজেদের শারীরিক সক্ষমতা- এ ছয়টি পরীক্ষামূলক বিষয়ের প্রশ্ন ও তার উত্তর দেবেন। প্রতিটি বিষয়ের জন্য প্রথম বিতর্কের মতোই দুই প্রার্থী ১৫ মিনিট করে সময় পাবেন। যা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
রবিবার (৯ অক্টোবর) দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে মুখোমুখি হন হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিন পররাষ্ট্রনীতি উপস্থাপনের চেয়ে একে অপরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেই কথা বেশি বলেছেন তারা। বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ই-মেইল কেলেঙ্কারির জন্য হিলারির কারাগারে থাকা উচিত। নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি হিলারির বিষয়ে তদন্ত চালাতে একজন স্পেশাল প্রসিকিউটর নিয়োগ দেবেন। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের জবাবে হিলারি বলেন, ট্রাম্প যা বলেছেন সেটা একেবারেই মিথ্যা। এতে আমি বিস্মিত হইনি। এটা বরং খুবই ভালো হয়েছে যে, ট্রাম্পের মতো একজন বদমেজাজি লোক আমাদের দেশের সর্বময় কর্তা হতে পারেন না। হিলারির এমন বক্তব্যের মাঝপথেই ফের হিলারিকে জেলে পাঠানো উচিত বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। বিতর্ক চলার সময় ট্রাম্পকে ২০০৫ সালে এক অডিও সাক্ষাৎকারে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। আত্মপক্ষ সমর্থন করে ট্রাম্প উল্টো তীব্র আক্রমণ করেন হিলারি দম্পতিকে। নারীদের সঙ্গে নিজের যে কোনও ধরনের যৌন অসদাচরণের কথা অস্বীকার করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান দলীয় এ প্রার্থী বলেন, ২০০৫ সালের অশালীন মন্তব্য নিয়ে তিনি গর্বিত নন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে বিল ক্লিনটন সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতন চালিয়েছেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিতর্কে শেষ পর্যন্ত কোন প্রার্থী জয়ী হয়েছে সে ব্যাপারে জরিপ পরিচালনা করে ইউগভ ও সিএনএন/ওআরসি। অনলাইনে ৮১২ জন রেজিস্টারকৃত ভোটারের(যারা হিলারি-ট্রাম্পের বিতর্ক দেখেছেন) সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে ইউগভের জরিপটি চালানো হয়েছে। আর টেলিফোন ও সেলফোনে ৫৩৭ জন ভোটারের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলাদা আরেকটি জরিপ চালায় সিএনএন/ওআরসি।
দ্বিতীয় বিতর্ক নিয়ে সর্বশেষ দুটি জনমত জরিপই বলছে, বিতর্ক শেষে কিছু কিছু ভোটার তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। দ্বিতীয় বিতর্কের আগে সিএনএন-এর এক জরিপে বলা হয়েছিল, ৫৮ শতাংশ ভোটার হিলারিকে সমর্থন দেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বিতর্ক শেষে তা ৫৭ শতাংশতে নেমে এসেছে। আর ইউগভ জানিয়েছিল ৪৮ শতাংশ সমথৃনের কথা যা পরে ৪৭ শতাংশতে নেমে এসেছে।
সর্বশেষ পরিচালিত বিভিন্ন জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন হিলারি। সূত্র: বিবিসি।