সিঙ্গাপুরে যে মসজিদে বসে আনসারুল্লাহর সদস্যরা বাংলাদেশে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করতে, এর নাম অ্যাঙ্গোলিয়া মসজিদ। এটি সিঙ্গাপুরের সেরাঙ্গুন রোডের মোস্তফা সেন্টারের পাশে অবস্থিত। এই এলাকাও বাংলাদেশি অধ্যুষিত। এমনটিই বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এ ঘটনার পর মসজিদটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয় বাংলাদেশিদের। এব্রামজি মোহামেদ সালেহ অ্যাঙ্গোলিয়া নামের এক ব্যবসায়ী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১৮৫০ সালে সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে তিনি ব্যবসায় ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। ১৮৯০ সালে তিনি সেখানে ‘মসজিদ অ্যাঙ্গোলিয়া’ নির্মাণ করেন। তার মৃত্যুর পরে তার নাতি ইউসুফি এব্রামজি অ্যাঙ্গোলিয়া দাদা সালেহের ব্যবসা বাণিজ্য দেখাশোনা করতেন। ১৯০৪ সালে তিনিও মারা যান। ব্যবসায়ী অ্যাঙ্গোলিয়ার সহায় সম্পদ ট্রাস্টের অধীনে চলে যায়।
মোস্তফা সেন্টারের পাশে দৃষ্টিনন্দন মসজিদকে ঘিরে সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশি মসুলমানরা আড্ডা দিয়ে থাকেন। এবাদত ছাড়াও নিজেদের অনেক বৈঠক সেখানে করেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। সম্প্রতি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও জঙ্গিদের তৎপরতা লক্ষণীয়।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জঙ্গি দমনে বিশেষ সেল খোলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর অধিকাংশ সময়ই ব্যয় হয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ও আল-কায়েদার শাখা সংগঠনের বিষয়টি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো অস্বীকার করলেও বিভিন্ন নামে জঙ্গিদের সংগঠন রয়েছে এ দেশে।
রাজধানীতে ইতালির নাগরিক তাভেল্লা হত্যায় জঙ্গি সম্পৃক্ততা না পেলেও রংপুরে ওসি কুনিও হত্যায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’তুল মুজাহিদিনের সদস্যরা জড়িত বলে পুলিশ জানায়। এছাড়া, পুলিশ হত্যা, শিয়া ও কাদিয়ানি মসজিদে হামলার ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা জড়িত বলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন।
এসব নিয়ে বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতার প্রতি বাইরের দেশগুলোরও নজর রয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরে কিছু বাংলাদেশির ওপর সেদেশের গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন থেকে নজরদারি করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত নভেম্বরে সিঙ্গাপুরের বিভিন্নস্থানে কর্মরত ২৭ বাংলাদেশি শ্রমিককে আটক করেন। আটককৃতরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলেও তারা নিশ্চিত হন। এরপর একজন বাদে ২৬ জনকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। এসব বাংলাদেশি অ্যাঙ্গোলিয়া মসজিদে বসেই যত জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা ও বাংলাদেশে নাশকতার পরিকল্পনা করতেন বলে সে দেশের গোয়েন্দারা বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করেন।