সারাদেশের তিন হাজার ৮১৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ককে পর্যায়ক্রমে চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন,‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১ হাজার ১৪০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ককে যথাযথ মানসম্পন্ন ও প্রশস্ত করার জন্য আমরা ১০টি সড়ক জোন ভিত্তিক ১০টি গুচ্ছ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে ৪৬৫ কিলোমিটার সড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এতে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অর্থমন্ত্রী বলেন,‘যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে চলমান কার্যক্রমগুলো নির্ধারিত সময়ে ও দক্ষ বাস্তবায়ন আর মানোন্নয়নই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। আরও ৪৩৬ কিলোমিটার সড়ককে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। দেশর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি চলাচলের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি ক্ষতি রোধ করার ওপর আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের মহাসড়ক নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ ২৮টি স্থানে এক্সেল লোড স্টেশন স্থাপন করা হবে।’
সেতুবিভাগের পরিকল্পনা বর্ণনা করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন,‘দেশের পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার জন্য ৬১টি সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। চলমান আছে দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণের কাজ। গলাচিপা,পায়রা ও কচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এবং পাটুরিয়া গোয়ালন্দ অবস্থানে ভবিষ্যতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এছাড়া বগ সেতু,মোংলা সেতু ও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (ঝপঝপিয়া) নির্মাণের জন্য চীন সরকারের সঙ্গে সমাঝোতা স্মারক হয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, ২০২২ সাল নাগাদ এর কাজ সম্পন্ন করতে পারবো।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের পঞ্চম বাজেট এটি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটির বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত বাজেটে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এবারের বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ও বৈদেশিক অনুদান ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। কর ব্যতিত রাজস্ব প্রাপ্তি ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান ৪ হাজার ৫১ কোটি টাকা। এডিপি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা ও ঘাটতি ১ লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। এদিকে নিট ঋণ ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।
বাজেটে জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার প্রত্যাশা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।
নতুন বাজেটের আকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৬৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বেশি। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এর আকার ৯৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটের আকার তিন লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন ৬০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১০ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ খরচ হবে। সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘাটতির বাকি ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার কোটি টাকা আসবে অন্যান্য উৎস থেকে।
















 
                                     
                                     
                                     
                                    



 
                                            



