সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের কনটেন্ট রিপোর্টিং, অপাসারণ, ব্যবহারকারী তথ্য এবং কমিউনিটি গাইডলাইন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে কমিশনের প্রধান সম্মেলন কক্ষে ছিল এই আয়োজন।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় টিকটকের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন– সংস্থাটির লিগ্যাল পলিসি অপারেশনস কর্মকর্তা কেরি উডস এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পাবলিক পলিসি ম্যানেজার ফেরদাউস মোত্তাকিন, দেশের আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিটিআরসির ডিজিটাল নিরাপত্তা সেলের কর্মকর্তারা।
কর্মশালায় টিকটকের কনটেন্ট রিপোর্টিং ও অপাসারণ সংক্রান্ত কমিশনের কার্যক্রমের ওপর উপস্থাপনা করেন কমিশনের সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ। এ সময় তিনি টিকটকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং দেশের বিদ্যমান আইনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘পারস্পরিক যোগাযোগ, জনমত তৈরি, সমাজসেবামূলক, সৃজনশীল ও অর্থনৈতিক কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহৃত হলেও নানা নেতিবাচক ও অপরাধমূলক কার্যক্রমে এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় রেখে সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে টিকটক ও দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বাস্তবিক উপায় খোঁজার পরামর্শ দেন।’
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে এই ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে ভালো কন্টেন্টের পাশাপাশি অনেক মানহানিকর ও অগ্রহণযোগ্য কনটেন্ট দৃশ্যমান হচ্ছে।’ রাষ্ট্রবিরোধী, সমাজবিরোধী, মানহানিকর ও ধর্মীয় উসকানিমূলক ভিডিও নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশের সামজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গাইডলাইন প্রস্তুতের আহ্বান জানান তিনি।
টিকটক তার কমিউনিটির জন্য আনন্দময় সব কনটেন্ট সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির লিগ্যাল পলিসি অপারেশনস কর্মকর্তা কেরি উডস বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজার টিকটকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিটি গাইডলাইন, গ্রাহকের সেফটি পলিসি এবং এ দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে বিবেচনায় রেখে প্রতিনিয়ত প্ল্যাটফর্মটিতে ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে। এছাড়া কন্টেন্ট মডারেশন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের একটি বড় টিম কাজ করছে, যারা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ভাষা বোঝেন।’ আগামীতে টিকটককে একটা নিরাপদ ও গ্রাহকবান্ধব প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
কর্মশালায় আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাস্তবিক পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করা হয় এবং অগ্রহণযোগ্য ভিডিও অপসারণ ও কন্টেন্ট প্রস্তুতকারী শনাক্তকরণে টিকটকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। জবাবে টিকটকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পাবলিক পলিসি ম্যানেজার ফেরদাউস মোত্তাকিন বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন, সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসগুলোর মতামত বিবেচনায় নিয়ে টিকটকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইললাইন হালনাগাদকরণ ও কন্টেন্ট মনিটরিংয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকার করেন।
তিনি আরও জানান, বিটিআরসিসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার মতামত ও পরামর্শ আমলে নিয়ে কনটেন্ট ফিল্টারিং, ফেইক আইডি শনাক্তকরণ ও অগ্রহণযোগ্য ভিডিও কন্টেন্ট অপসারণের কার্যক্রম নেওয়া হবে। এছাড়া বিটিআরসির সঙ্গে পারস্পারিক সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়েও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।