Ajker Digonto
বৃহস্পতিবার , ২৪ অক্টোবর ২০১৩ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. অর্থনীতি
  4. আইন- আদালত
  5. আইন-আদালত
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আলোচিত মামলা
  8. খুলনা
  9. খেলা
  10. খেলাধুলা
  11. চট্টগ্রাম
  12. চট্টগ্রাম বিভাগ
  13. জাতীয়
  14. ঢাকা
  15. তথ্য প্রযুক্তি

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব : বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রতিবেদক
Staff Reporter
অক্টোবর ২৪, ২০১৩ ৭:০১ অপরাহ্ণ
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব : বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গি

পোর্টাল বাংলাদেশ ডেস্ক।

প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশেই ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকে। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। কাজেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ সময় অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ধীরগতিতে চলে। এ প্রবণতা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং গণতান্ত্রিক সব দেশেই তা ঘটছে। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংক বিশ্বাস করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল হবে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি ইউহানেস জাট চলমান রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেন।

‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক।

ইউহানেস জাট বলেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে বিনিয়োগের খরা কেটে যাবে বলে আশা করেন তিনি। অক্টোবর পর্যন্ত অর্থনীতির সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত সমন্বয় করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

 

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। এ সময় বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের কমিউনিকেউশন অফিসার মেহরিন এ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরে সরকারের বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে না। বিশ্ব ব্যাংক মনে করছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হবে। তবে সরকারের মেয়াদের শেষ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করা প্রকাশ হয়েছে।
জাহিদ বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হলেও প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি হবে বলে তিনি মনে করেন না। গত চারটি জাতীয় নির্বাচন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনের বছর অর্থনীতির অনেক খাতই স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতে পারে না। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন ভালো। রপ্তানি ও রেমিটেন্স বেড়েছে। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ রেকর্ড গড়েছে। মূল্যস্ফীতিও কমে আসছে। এখন মূল্যস্ফীতি বাড়লে অভ্যন্তরীণ কারণে বাড়বে। নির্বাচনের কারণে রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নের সমস্যা হতে পারে, আর সুশাসন ও জনশক্তি রপ্তানিও ব্যাহত হতে পারে। এসবের প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রপ্তানি কমে গেছে। এর প্রভাবে রেমিটেন্স প্রবাহ চলতি অর্থবছরে গত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে।
২০১১-১২ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হয়। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ১ শতাংশ আছে বলে জানান তিনি বলেন, এতে সন্তুষ্ট হবার কোন কারণ নেই। এটা এখনো কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়ে বেশি আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করেছে বলে বিশ্ব ব্যাংক মনে করছে।
জাহিদ হোসেনের মতে, বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তৈরি পোশাক শিল্পের সাফল্য ধরে রাখা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ক্রেতাদের আস্থায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের এই সমস্যার জন্য কে দায়ী, কে দায়ী নয়- এসব বলার সময় এখন নেই। এ খাতের ভাবমূর্তি উন্নয়নে কিছু করতে হবে।
ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের সংগঠন অ¨vকর্ড ও অ¨vল্যায়েন্স বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শন ও কর্মপরিবেশের উন্নয়নে সহযোগিতার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ভালো বলেই মনে করেন জাহিদ হোসেন। তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সমন্বয়ের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন তিনি। এই সমন্বয় যদি না হয়, তাহলে আরও বড় ধরনের সংকটে পড়বে পোশাক খাত।
পোশাক খাত ছাড়াও বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদে‡kর অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি খাতে প্রকৃত বিনিয়োগ এ অর্থবছরে ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা, তৈরি পোশাক খাতে কমপ্লায়েন্স ব্যর্থতা ও শ্রম অসন্তোষ, ব্যাংক খাতে কেলেঙ্কারি ইত্যাদি কারণে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছেন। অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতের দুর্বলতা, দুর্নীতি, মূলধনের অভাব ও আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা এখনও বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ হারে, যা ২০১১-১২ সালে ছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এ সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা আগের বছর ১০ দশমিক ২০ শতাংশ ছিল।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান বিরোধের প্রভাব নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ব ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আমরা মনে করি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। এজন্য ক্ষমতার পালাবদল হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। তার ভাষায়, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের অর্থ হচ্ছে নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা থাকবে।
প্রশ্নের জবাবে প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অভিঘাত আসতে পারে। এর বিরূপ প্রভাবে চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অভিজ্ঞ এ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সংকট অভ্যন্তরীণ যা প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ চাই যেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চলতে পারে। এর জন্য অর্থনীতিকে রাখতে হবে রাজনীতির আওতার বাইরে। এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। কেননা, এর মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। সেজন্যই বাংলাদেশে সবার অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় বিশ্বব্যাংক_ মন্তব্য করেন জাট। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে আশাবাদী উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের এ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তা অচিরেই কেটে যাবে এবং সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এর ফলে এখন যে বিনিয়োগে খরা চলছে তার চিত্র বদলে যাবে।

বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় বিশ্বব্যাংক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করে ওয়াশিংটনভিত্তিক এ সংস্থাটি। অর্থনীতির ধারা সচল রাখতে আসন্ন নির্বাচন সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ - অন্যান্য