আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) অনুরোধে সাড়া দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে নিয়ে মতামত জানিয়েছে বাংলাদেশ। আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার গত ৭ মে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে মতামত জানানোর অনুরোধ করে। এ ক্ষেত্রে ১১ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় তারা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সাড়া দিলো বাংলাদেশ।
বৃহ্স্পতিবার (৭ জুন) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আইসিসির অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমাদের জবাব হস্তান্তর করেছি।’
এখন পর্যন্ত তিন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান আইসিসির অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাদের মতামত দিয়েছে।
আইসিসি প্রকাশ্যে বা গোপনীয়ভাবে মতামত জানানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বলেছিল। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টির স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে গোপনীয়ভাবে তাদের মতামত জানিয়েছে।
কোর্টের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) হিসেবে ডা. মোহাম্মাদ হাদি জাকের হোসেইন এবং আন্তর্জাতিক কমিশন অব জুরিস্ট তাদের মতামত দিয়েছে। এছাড়া ৪০০ জন রোহিঙ্গার পক্ষে একটি আন্তর্জাতিক এনজিও গ্লোবাল রাইটস কমপ্লায়েন্স তাদের মতামত দিয়েছে।
আইসিসির প্রসিকিউটর ফেতো বেনসুদা মিয়ানমার থেকে জোর করে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করে বাংলাদেশে পাঠানো সংক্রান্ত অভিযোগ বিচার করার অধিকার আদালতের আছে কিনা জানতে চেয়ে গত ৯ এপ্রিল একটি পিটিশন দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আইসিসি বাংলাদেশের মতামত চায়।
বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ
‘যেকোনও ধরনের জাতিগত নিধন সম্পর্কিত বিষয়ে মতামত দেওয়া বাংলাদেশের কর্তব্য। রোম স্ট্যাটিউটের সদস্য হিসেবে এ বিষয়ে আমরা চুপ থাকতে পারি না’ বলে মন্তব্য করেন একজন কর্মকর্তা।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মাদ বেলাল নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত রোম স্ট্যাটিউটের ১৬তম অ্যাসেম্বলিতে বলেছিলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা সঠিক কাজটি করেছি এবং আমি সবাইকে আহবান জানাই তারা যেন মানবিকতার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।’
আইসিসি নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অবস্থিত।
২০ জুন শুনানি
আগামী ২০ জুন প্রি-ট্রায়াল চেম্বার এ বিষয়ে শুনানির জন্য রুদ্ধদ্বার কক্ষে মিলিত হবে। সেখানে শুধুমাত্র ফেতো বেনসুদা উপস্থিত থাকবেন।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে দায়বদ্ধতার বিষয়টি উত্থাপন করে আসছিল এবং এ কারণে বেনসুদা ইস্যুটি আদালতের সামনে নিয়ে আসেন।
সম্প্রতি গণহত্যা সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত আদামা দিয়েং বাংলাদেশ সফরের সময় বলেছিলেন, ‘মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের শুধুমাত্র তাদের পরিচয়ের জন্য হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, জীবিত পুড়িয়ে মারা এবং অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।’
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এ ছাড়া আগে থেকে ছিল আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা। গত ২৫ আগস্টের পরে যারা পালিয়ে এসেছে তাদের মথ্যে ৩০ হাজার অন্তঃসত্তা নারী, ৩৬ হাজার এতিম এবং মা-বাবা নিখোঁজ এমন প্রায় আট হাজার শিশু রয়েছে।