পোর্টাল বাংলাদেশ ডটকম. নিজস্ব সাংবাদিক সেমিনার থেকে ফেরত এসে।
১৯ অক্টোবর ২০১৩ শনিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসকাবের ভিআইপি লাউঞ্জে দেশমাতৃক পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আলোচনায় প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষ আজ উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ নিহত হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল ঠিক আজও টিভি, সংবাদপত্র, বিভিন্ন মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যারাই তাদের এই অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদ করছেন, তাদের উপর নেমে আসছে হত্যা, গুম, গ্রেফতার, হয়রানীসহ নানারকম নিপিড়নমূলক আচরণ। বাংলাদেশের মানুষ এখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বিরাজ করছে। দেশ এখন হীরক রাজার দেশে পরিণত হয়েছে। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রের সমস্ত জানালা এভিনিউজ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির মাননীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক, আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিকসহ বিভিন্ন স্তরের সাংবাদিক, কলামিস্ট প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন সংসদ সদস্য রাশেদা বেগম হীরা।
আওয়ামী লীগের শিরা-উপশিরায়, ধমনীতে, ডিএনএ-তে স্বৈরাচার : ড. ওসমান ফারুক।
আলোচনায় ড. ওসমান ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগের ধমনীতে শিরায়-উপশিরায় ডিএনএতে রয়েছে স্বৈরাচার। আওয়ামী লীগ এদেশের সকল সামরিক অভ্যুত্থানে বা সামরিকদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। ১৯৭৫ সালের আগস্টের ১৫ তারিখ যে সামরিক বিদ্রোহ বা বিপ্লব সংঘটিত হয় তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং তাকে সহযোগিতা করেছিলেন প্রচুর সংখ্যক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখে সংঘটিত সামরিক বিদ্রোহ বা বিপ্লব-এও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল। ২০০৭ সালের জানুয়ারির ১১ তারিখের ওয়ান ইলেভেন নামক ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত ছিল এবং আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যেই বলেছে যে, ওয়ান ইলেভেন হচ্ছে তাদের আন্দোলনের ফসল। আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র কোনোদিন নিরাপদ ছিল না এবং এখনও নেই।
সরকার কি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে? সৈয়দ ইবরাহিম।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান, মেজর জেনারেল ইবরাহিম বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী ভাষণের মাধ্যমে শান্তির ল্েয অনেক প্রকারের আহ্বান জানানো হয়েছিল। আবার আজ ১৯ অক্টোবর তারিখেই সভা-সমিতি নিষিদ্ধ করে দেয়া হল। এতে করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মনের ভেতরে যেই নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে সেটা জনসমে প্রতিফলিত হল। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ৭ তারিখের পর এবং ২৫ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত তৎকালীন ইয়াহিয়া সরকার, তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে আলোচনার নামে ব্যস্ত রেখেছিল, কিন্তু তলে তলে বাঙালি জাতির ওপর আক্রমনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। বর্তমানেও আওয়ামী লীগ সরকার প্রকাশ্যে আলোচনা ও গণতন্ত্র রার পদপে নিচ্ছেন এইরূপ দেখালেও, অপ্রকাশ্যে রাজনৈতিক প্রতিপরে ওপর হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিতে পারেন; এ প্রসঙ্গে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাংবিধানিকভাবে নিরপে ব্যক্তি সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে সরকার প্রধান হিসেবে মানতে রাজি ছিলেন না। তাহলে অক্টোবর ২০১৩ সালে, সাংবিধানিকভাবে দলীয় ব্যক্তি আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তাবনা একটি ঐতিহাসিক তামাশা বটে।
বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয়, নির্ধারিত সরকার : ড. তুহিন মালিক।
আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক বলেন, ১৯ অক্টোবর অপরাহ্নে এই গোলটেবিল আলোচনাটিই আপাতত সর্বশেষ আলোচনা হতেই পারে। কারণ, সরকার নাগরিক অধিকারসমূহের উপরে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। বর্তমান সরকার, ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে নির্বাচিত সরকার নয় বরং ঐ তারিখের নির্ধারিত সরকার। সর্বদলীয় সরকারের কোনো বিধান বর্তমান সংবিধানে নেই। দলীয় সরকার ও পার্লামেন্ট বহাল রেখে নির্বাচন করার বিধান ও প্রস্তাবনা অসাংবিধানিক ও অবাস্তব। কারণ, একটি গ্লাসে যদি পানি ভর্তি থাকে তাহলে সেই গ্লাসে যেমন নতুন পানি ভরা যাবে না তেমনই একটি পার্লামেন্ট বিদ্যমান থাকা অবস্থায়, সংসদ সদস্যগণ স্বীয় পদে বহাল থাকা অবস্থায় একই আসনে কী প্রকারে নতুন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা যাবে?