স্ত্রী, সন্তান, পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং বন্ধুসহ সাত জন মিলে সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় বেড়াতে গিয়েছিলেন দেবব্রত কুমার সরকার। এজন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে অগ্রিম সাতটি রিটার্ন টিকিট কেটেছিলেন তিনি।যাওয়ার সময় কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে বিপত্তির মুখে পড়েন তারা। ফ্লাইট ছাড়ার আগে চেক ইন-এর সময় তাদের জানানো হয় যে, দুটি টিকিট ছেড়ে দিতে হবে। কারণ হিসেবে বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়- দুজন ‘ভিআইপি’ যাত্রী রয়েছেন। এক পর্যায়ে দেবব্রত কুমার সরকার দুটি টিকিট ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
এঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেছেন দেবব্রত কুমার। ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ায় বিমানের প্রতিনিধি ও যাত্রীকে ২১ নভেম্বর শুনানির জন্য উপস্থিত থাকতে চিঠি দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেবব্রত কুমার সরকার গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবা নিয়ে দুর্ভোগের বিষয়ে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার ১ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠান। সেখানে বলা হয়, ‘২১ নভেম্বর বিমান প্রতিনিধির উপস্থিতিতে যাত্রীর অভিযোগের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’
অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন্ধু ও আত্মীয়সহ সাত জন মিলে সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা থেকে কলকাতায় বেড়াতে যান দেবব্রত কুমার সরকার। এজন্য তিনি ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে কলকাতার যাওয়া এবং ১১ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে সাতটি রিটার্ন টিকিট কিনেছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে ঢাকা ফেরার পথে বিপত্তিতে পড়েন তারা। দেশের ফেরার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে বোডিং করার সময় দেবব্রতকে জানানো হয়, তাদের সাতটি টিকিট থেকে দুটি টিকিট ছেড়ে দিতে হবে। বোডিং কাউন্টারে বিমানের কর্মীরা দেবব্রত কুমারকে জানান- ভিআইপি যাত্রীদের জন্য দুটি টিকিট ছাড় দিতে হবে।পরের ফ্লাইটে তাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হবে।
বাধ্য হয়ে তখন দেবব্রত কুমার দুটি টিকিট ছেড়ে দেন। সঙ্গে থাকা শিশু সত্যব্রত সরকারকে কোলে নিয়ে পাঁচ আসনে মোট ছয় জন ঢাকায় ফেরেন। আর বন্ধু কৃষ্ণ সাহাকে কলকাতা বিমানবন্দরে রেখে আসেন। অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে দেওয়া দেবব্রতের অভিযোগে বলা হয়, বিমানবন্দরে সারারাত একা থেকে পরদিন কৃষ্ণ সাহা দেশে ফেরেন। নিয়ম থাকলেও কৃষ্ণ সাহাকে রাতে থাকা ও খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করেনি বিমান কর্তৃপক্ষ।
দেবব্রত কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,দুটি টিকিট ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিমান থেকে আমাকে আগেভাগে জানায়নি। আমার বন্ধুটি সারারাত না খেয়ে বিমানবন্দরে কাটিয়েছে। এটাকে কী ধরনের সেবা বলবেন? আমাদের বেড়ানোর মজাটাই ম্লান হয়ে গেছে।’ যাত্রীদের প্রতি এ ধরনের অবজ্ঞা ও অবহেলার প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে কলকাতায় বিমান বাংলাদেশের স্টেশন ম্যানেজার ফখরুল টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। তবে কোনও অভিযোগ থাকলে আমাকে ইমেইল করলে, আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’