বৈরী আবহাওয়া, থেমে থেমে বৃষ্টি ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ঈদে রাজধানী ছাড়া ঘরমুখো মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফেরিঘাট ও বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে। গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁওয়ে ২০ কিলোমিটার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জে ১২ কিলোমিটার, সাভারের আশুলিয়ায় বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কে প্রায় ছয় কিলোমিটার যানজটের শিকার হন যাত্রী ও গাড়িচালকরা। কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হয় পাঁচ ঘণ্টায়।
এছাড়া ফেরি পারাপারে ধীরগতির কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের পাটুরিয়ায় দুপুরে ছিল যানবাহনের চার কিলোমিটার দীর্ঘলাইন। একই সময় দৌলতদিয়ায় পারের অপেক্ষায় ছিল তিন শতাধিক যানবাহন। একই দিন শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটের শিমুলিয়ায় পারাপারের অপেক্ষায় ছিল পাঁচ শতাধিক যানবাহন।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মাহাবুব আলম বাবু জানান, ঈদকে সামনে রেখে শিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণবঙ্গগামী মানুষের ঢল নেমেছে। পারাপারের অপেক্ষায় আছে ছোট বড় পাঁচ শতাধিক যানবাহন। গতকাল সকাল থেকেই শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যানবাহনের চাপ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি দেখা যায়। দুটি চ্যানেলের মাধ্যমে ১৬টি ফেরি ব্যবহার করে যানবাহন পারাপার করছে।
মানিকগঞ্জ থেকে শহিদুল ইসলাম সুজন জানান, ঈদে দক্ষিণাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ পড়েছে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়। পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত রয়েছে যানবহনের দীর্ঘ লাইন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পারের অপেক্ষায় ছিল বাস, ট্রাক ও ছোট গাড়ি মিলে তিন শতাধিক যানবাহন।
রাজবাড়ী থেকে মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে আটকা পড়েছে শতাধিক যানবাহন। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের ভিড় বাড়তে থাকায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত পারের অপেক্ষায় ছিল কয়েকশ ট্রাক, বাস ও ছোট যানবাহন। পারের অপেক্ষায় থাকা কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী মো. রওশন ম-ল জানান, ঘাটে আরও বেশি ফেরি থাকা দরকার।
সাভার থেকে জাহিদুর রহমান জানান, যানবাহনের চাপে সাভারের আশুলিয়ায় বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কে গতকাল প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। সকাল থেকে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক ফরহাদ হায়দার জানান, যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের জিরাবো, আশুলিয়া বাজার ও জামগড়া এলাকায় থেমে থেমে গাড়ি চলে।
রূপগঞ্জ থেকে সহিদুল করিম বিপ্লব জানান, গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল যানজট। মহাসড়ক দুটির পাশের বিভিন্ন স্থানে গরুর হাট বসানো, আইন অমান্য করে যানচলাচল, কাঞ্চন সেতুতে ধীরগতিতে টোল আদায়, সড়কের বেহালদশাসহ বিভিন্ন কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করেও যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।
সোনারগাঁ থেকে খাইরুল ইসলাম জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুর টোল প্লাজা এলাকা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক যাত্রীকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। কুমিল্লাগামী তিসা পরিবহনের যাত্রী আল আমিন মিয়া ও আবুল কালাম জানান, কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পার হতেই আমাদের ৫ ঘণ্টা সময় বাসে বসে থাকতে হয়েছে।