আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে। কারণ, মুদ্রা ও দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রিত মূলধন বাজার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। প্রাক-বাজেট আলোচনাসহ বিভিন্ন ফোরামেও আর্থিক খাত নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেশে আর্থিক খাতে বরাবরই প্রশংসনীয় স্থিতিশীলতা বজায় ছিল, যা আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) পুনর্নির্ধারণসহ কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় অচলাবস্থার নিরসন হয়েছে।
এছাড়া, ফার্মার্স ব্যাংক পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে কাঠামোগত ব্যর্থতা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে এবং এর ফলে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে এসেছে।
যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে:
আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় বিদ্যমান বিধিবিধান প্রয়োগের পাশাপাশি কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ব্যাংকগুলোতে আমানত ও ঋণের সুদ/ মুনাফা হার মাসে শুধুমাত্র একবার পরিবর্তন এবং পরিবর্তিত সুদ হার তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা আরোপ। ঋণ এবং আমানতের গড় ভারিত সুদ হারের ব্যবধান ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ আবেদন ফি ২০০ টাকায় সীমিত রাখা এবং মেয়াদ পূর্তিতে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কোনও চার্জ আদায় না করা। পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়তা তহবিল পরিচালনা। বৃহৎ ঋণ খেলাপি মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষায়িত সফটওয়্যার চালু করা। সুষ্ঠু এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নির্দেশনা সম্বলিত গাইডলাইন জারি। এমএফএস (মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস)- এর ক্ষেত্রে একক ব্যক্তির মোবাইল হিসাবের স্থিতি সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকায় নির্ধারণ। বীমা কোম্পানি ও করপোরেশনগুলোতে Uniform KYC (Know Your Customer) Profile জারির নির্দেশনা। স্বল্প সুদে ও সহজশর্তে বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা দেওয়া। ব্যাংকিং সেবা বিষয়ক অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্রাহক সেবা সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। ব্যাংকের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা প্রদান। বৃহৎ ঋণগুলোকে আরও নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করার লক্ষ্যে Central Database For Large Credit (CDLC) গঠন। অনেকক্ষেত্রে একই সম্পদ বা জমি জামানত দেখিয়ে ব্যাংক ঋণ অনিয়মিতভাবে নেওয়া হয়। এই জালিয়াতি রোধের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে সব ঋণের বিপরীতে যে জামানত দেখানো হয়, সে সম্পর্কে একটি তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ করা হবে। যেকোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই তথ্য যাতে যাচাই করতে , সে ব্যবস্থা আগামী বছরেই কার্যকরী হবে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ ব্যবহারের মাধ্যমে বন্ড মার্কেটের উন্নন ঘটানো সম্ভব হয়। এ দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা Floating Rate Treasury Bond (FRTB) চালু করতে যাচ্ছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে গাউডলাইন ও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। লক্ষ্য করার বিষয় হলো— ব্যাংকিং শিল্পে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের হিস্যা প্রায় ২০ শতাংশ হলেও এখনও শরিয়াভিত্তিক কোনও সিকিউরিটিজ এর প্রচলন করা হয়নি। বর্তমানে আমরা শরিয়াভিত্তিক সিকিউরিটিজ প্রচলনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। এছাড়া, সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের তথ্যভাণ্ডার প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনায় অধিকতর শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে।’
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে তথ্য বিনিময় ও আন্তঃসংস্থা সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে Bangladesh Financial Intelligence Unit (BFIU) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। উক্ত সমঝোতা স্মারকের আওতায় সংস্থা দুইটি নিজেদের ডাটাবেইজে সংরক্ষিত তথ্যাদি আদান-প্রদান এবং মানিলন্ডারিং অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারবে।