Ajker Digonto
বৃহস্পতিবার , ১ আগস্ট ২০২৪ | ১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. অর্থনীতি
  4. আইন- আদালত
  5. আইন-আদালত
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আলোচিত মামলা
  8. খুলনা
  9. খেলা
  10. খেলাধুলা
  11. চট্টগ্রাম
  12. চট্টগ্রাম বিভাগ
  13. জাতীয়
  14. ঢাকা
  15. তথ্য প্রযুক্তি

মেয়েকে শুইয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন, গুলি গ্রিল ভেদ করে লাগে সুমাইয়ার মাথায়

প্রতিবেদক
আজকের দিগন্ত ডেস্ক
আগস্ট ১, ২০২৪ ৬:১৫ অপরাহ্ণ

ছোট্ট মেয়েটার সবে ঘুম এসেছে। সুমাইয়া মেয়েকে সযতনে বিছানায় শুইয়ে ছয়তলা বাসার বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। বাইরে রাস্তায় অস্থিরতা; আকাশে উড়ছে হেলিকপ্টার। হঠাৎ একটা শব্দ হলো, তারপরই মেঝেতে ঢলে পড়লেন সুমাইয়া।

সুমাইয়ার মা আছমা বেগম পেছন থেকে দেখলেন সে দৃশ্য। ভাবলেন, মেয়ে হয়তো শারীরিক অসুস্থতার কারণে অচেতন হয়ে পড়েছে। কিন্তু মেয়েকে ধরতেই দেখেন, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

ছুটে আসা এক প্রাণঘাতী বুলেট বারান্দার স্টেইনলেস স্টিল পাইপের গ্রিল ভেদ করে সুমাইয়ার মাথায় লেগেছিল। ঘটনাস্থলেই নীরবে প্রাণবিয়োগ ঘটে ২০ বছর বয়সি সুমাইয়ার।

নিহত সুমাইয়া আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

২০ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গুলিতে নিহত হন সদ্য মা হওয়া সুমাইয়া আক্তার। তার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানায়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নার বাধ মানে না মা আছমা বেগমের। ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, শারীরিক অসুস্থতার কারণে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু মেয়েকে ধরতেই দেখি, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। মৃত্যুর আগে বিদায় বলে যাওয়া তো দূরে থাক, আর্তনাদও করতে পারেনি মেয়েটা।’

আড়াই বছর আগে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। স্বামী জাহিদ হোসেন কাজ করেন স্থানীয় একটি কারখানায়। চলতি বছরের ১২ মে দুজনের সংসারে আগমন হয় মেয়ে সন্তানের। অসুস্থ মেয়ে ও নাতনিকে যত্নে রাখতে নিজের কাছে এনে রাখেন আছমা বেগম।

ঘটনার দিন আশপাশের অনেকের মতো আছমা বেগমও বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন আকাশে উড়তে থাকা হেলিকপ্টার। তার একটু পরেই সুমাইয়া গিয়ে দাঁড়ান সেখানে।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে নিহতের ফ্ল্যাটে উপস্থিত হন এ প্রতিবেদক। মহাসড়ক থেকে নেমে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে বাড়ির অবস্থান। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্রবেশ করতে দিলেন ঘরে।

মহাসড়ক থেকে এত ভেতরের একটি ফ্ল্যাটের বারান্দায় গুলির বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে আশপাশের বাসিন্দাদের। স্থানীয়দের দাবি, হেলিকপ্টার থেকে একাধিক গুলি ছোড়া হয়েছে। বহু বাড়ির ছাদে, বারান্দায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।

নিহতের বড়বোনের স্বামী বিল্লাল হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ সুমাইয়াকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রো-অ্যাক্টিভ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মরদেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সড়কে সংঘর্ষের কারণে শেষে ওই রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় সুমাইয়াকে দাফন করে পরিবার।

আড়াই মাসের নাতনি সুয়াইবার মাঝে এখন মেয়েকে খুঁজছেন আছমা। ছবি: সাবিত আল হাসান

‘বাসায় ফিরে দেখি, বারান্দার গ্রিল ফুটো হয়ে আছে। গুলিও উদ্ধার করা হয়। এটা স্পষ্ট যে, ছোড়া গুলিতেই মারা গেছে সে,’ বলেন বিল্লাল।

আড়াই মাসের নাতনি সুয়াইবার মাঝে এখন মেয়েকে খুঁজছেন আছমা। ‘আমার মেয়ে আরেকটা মেয়ে রেখে গেছে। ওর শরীরে আমার মেয়ের গন্ধ খুঁজি।’

‘স্বামীরে হারাইয়া গ্রাম থেকে শহরে আইসিলাম ভাতের জন্য, সেই শহরে আমার মেয়ে গুলি খাইয়া মরলো। ঘরের ভিতরেও আমার মেয়েটা নিরাপদে থাকতে পারল না,’ নাতনিকে কোলে জড়িয়ে বলেন শোকাতুর দাদি।

সুমাইয়ার বাবা সেলিম মাতব্বর মহামারির সময় মারা যাওয়ার পর আছমা বেগম তার পাঁচ সন্তানকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে চলে আসেন তিন বছর আগে।

মেয়ে নিহতের ঘটনায় বিচার চান কি না এমন প্রশ্নে আছমা বেগম বলেন, ‘আমি কারও কাছে বিচার চাইনা। আল্লাহ দেখছে কী হইসে। কারও দয়াও আমার দরকার নাই। আমরা শুধু স্বাভাবিকভাবে চইলা ফিরা থাকতে চাই।’

সর্বশেষ - বিনোদন

আপনার জন্য নির্বাচিত