সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাসহ নানা বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন অনেকে। কেউ কেউ মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে উসকানিমূলক বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছেন। মুহূর্তেই এসব পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে। এতে করে নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে পড়ছেন অনেকে। সর্বশেষ একজন পুলিশ সদস্যের কবজি কেটে নেওয়ার ঘটনায় অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে খারাপ মন্তব্য করেছেন। এতে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন। এই ধরনের বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এখন থেকে এ ধরনের পোস্ট যারা দেবেন তাদের খুঁজে বের করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে চিঠি দিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করেছে। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ফেসবুকের যে আইডি থেকে এই পোস্ট দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশই দেশের বাইরে থেকে। দেশের মধ্যে যে আইডি থেকে এগুলো শেয়ার করা হয়েছে সেগুলোও সঠিক পরিচয়ে খোলা হয়নি। ফলে আসল ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৫-৩০ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে সাইবার ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের একটি জেলার একজন ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে নিয়ে একটি বিশাল পোস্ট দিয়েছেন। তার সেই পোস্টকে ঘিরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে তার এই পোস্ট নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। একইভাবে একজন পুলিশ সদস্যের কবজি কেটে নেওয়ার ঘটনায় অনেকেই বিদ্বেষমূলক ও উসকানি দিয়ে মন্তব্য করেছেন। ‘পুলিশের কবজি কাটার ঘটনা ভালো হয়েছে’, ‘এভাবেই পুলিশকে শায়েস্তা করা উচিত’, ‘পুলিশের উচিত শিক্ষা হয়েছে’, ‘পুলিশ মিথ্যা নাটক করছে’ এমনসহ মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে। এদের বিরুদ্ধে এখন থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এই ধরনের বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যারা সামাজিক অস্হিরতা ছড়াচ্ছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এ নিয়ে গোয়েন্দাদের কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে।
এ ব্যাপারে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই কারণেই তো আমরা নতুন কিছু আইনের উদ্যোগ নিয়েছি। কেউ যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করেন বা রাষ্ট্রের বিপক্ষে কাজ করেন বা রাষ্ট্রের নীতিমালার বিপক্ষে কাজ করেন, সেটা সংবিধান এবং আইনেও অ্যালাউ করে না। আপনি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক কাজ করবেন, কোনো একটা পোস্ট দিয়ে কোনো জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি হবে আর সেই অপরাধীকে কেউ চিনবে না তা হয় না। এটা যে কোনো মানুষের পরিচয় নয়, অপরাধীর পরিচয় উন্মুক্ত করার বিষয়। এই অপরাধীর পরিচয় কোথা থেকে আসবে। এই প্ল্যাটফরমগুলো যারা চালায়, তাদের তা বলতে হবে।
এর আগে গত ১৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চালায় একটি চক্র। পুলিশ সদস্যদের ছবির সঙ্গে উসকানিমূলক, মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। এমন মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক পোস্ট ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশ সদস্যরা হতাশ হন। তাদের অনেকের মধ্যেই দেখা দেয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
সাইবার ইনভেস্টিগেশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘটনায় দেশে অবস্থান করা ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদের বড় একটি অংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েক জন নেতাও রয়েছেন। যারা ভুয়া আইডি খুলে এই ধরনের পোস্টগুলো শেয়ার করেছেন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে আসামির দায়ের কোপে হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয় কনস্টেবল জনি খানের। এই ঘটনায় লোহাগাড়া থানায় একটি মামলা করা হয়। এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত কবির ও তার স্ত্রীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে।