পদত্যাগ নয়, সংসদ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে বিরোধী দল। আজই তারা সংসদে যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে। আজ অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে সোমবার উপস্থাপিত তার প্রস্তাবনাও সংসদে বক্তব্য আকারে তুলে ধরতে পারেন বলে দলটির একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১৩ দিন মুলতবির পর আজ বিকাল সাড়ে চারটায় সংসদ অধিবেশন আবার বসছে। এর আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল এ অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কার্যউপদেষ্টা কমিটির আজকের বৈঠকে এর মেয়াদ আরো বাড়ানো হতে পারে।
গতরাতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে তারই সভাপতিত্বে বিএনপির সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। উল্লেখ্য, বিরোধী দল চলতি সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে যোগ দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি অনন্য নজির স্থাপন করে। তারই ধারাবাহিকতায় শেষ সময়েও সংসদে উপস্থিত থেকে আরেকটি নজির স্থাপন করতে চায় বলে বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। যার কারণে আপাতত তারা পদত্যাগের পক্ষে নন। তবে অধিবেশন ২৪ অক্টোবরের পর চালু রাখা হলে তারা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অবশ্য কয়েকদিন ধরে বিরোধী দলের সংসদ থেকে পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বিএনপির অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, অধিবেশনে যোগ দিয়ে তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে গত ২১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা জাতীয় সংসদে ভাষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করে দেশবাসীর কাছে তাদের অবস্থান ও আন্তরিকতার বিষয়টি জানান দিতে চান। বিরোধী দলের অভিমত, সংসদে এই প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হলে দেশবাসীর কাছে তাদের ইজেম বাড়বে। পাশাপাশি বল সরকারের কোর্টে যাবে। এতে করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের নৈতিক দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তাবে।
চারদলীয় জোট সরকারের সময় তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংস্কারের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে এক ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। যার কারণে ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে দেয়া এক ভাষণে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একটি কমিটি গঠনের কথা বলেন। যার সূত্র ধরে ২০০৬ সালের ২০ মার্চ থেকে দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে ৪ দফা চিঠি চালাচালি হয়। পরে বিএনপি তাদের প্রতিনিধি দলে ‘জঙ্গিবাদী ও যুদ্ধাপরাধীদের’ নাম দিয়েছে অভিযোগ তুলে ওই সময় দুই জোটের সংলাপ ভেঙে যায়। তারপর অক্টোবর মাসে অবশ্য দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে ব্যর্থ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংসদের মেয়াদ বাড়তে পারে : জাতীয় সংসদের চলমান ১৯তম অধিবেশনের মেয়াদ বাড়াতে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক বসছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকাল সাড়ে তিনটায় এই বৈঠক হবে। বৈঠকের নোটিশের আলোচ্যসূচিতে নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম (২০১৩ সালের চতুর্থ) অধিবেশনের অবশিষ্ট কার্যাদি নিষ্পন্নের জন্য সময় বরাদ্দ করার বিষয়টি রয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবদুস শহীদ আজকের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে আমার দেশ-কে বলেন, বুধবারের বৈঠকেই সংসদ অধিবেশন আর কতদিন চলবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে গত ১২ সেপ্টেম্বর ১৯তম অধিবেশন শুরু হয়। ওইদিন কার্যউপদেষ্টা কমিটি আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত অধিবেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরদিন থেকে দশম সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে।