১৮ অক্টোবর ২০১৩, বিটিভিতে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি তাৎক্ষণিক শুনেছিলাম। ২১ অক্টোবর ২০১৩, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, আমি সেখানে ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য শুনেছি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রায় ২০ মিনিটের ভাষণ নাতিদীর্ঘ ছিল। ভাষণটি গোছানো ছিল। তবে ভাষণের যে অংশটি অগোছালো মনে হয়েছে, সেটি হচ্ছে- আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যথা পুলিশ ও র্যাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শুরু করা। এর পরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাকে স্মরণ করেন। তার সরকারের গত পাঁচ বছরের সাফল্য ও কৃতিত্ব জাতির সামনে অতি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। তিনি বিদ্যুৎ সেক্টর নিয়ে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সেবা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পৌঁছে যাওয়ার কথা বলেন, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নের কথা বলেন ইত্যাদি। তিনি যে কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলেছেন সেটি জনগণের জ্ঞাতার্থে জাতির সামনে তুলে ধরছি। তিনি বলেছেন, ২০০৬ সালের আগে বিশ্বে বাংলাদেশের বদনাম এতটাই ছিল যে, তখন লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যেত। এর জন্য তিনি বিএনপিকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, তার সরকারের আমলে সেই বদনাম ঘুচিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ এতটাই সুনামের অধিকারী হয়েছে যে, মানুষ এখন শ্রদ্ধার সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করে। দ্বিতীয়ত, তিনি বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেন জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ওপর চেপে বসেছিল এবং এর জন্য বিএনপি দায়ী। এরূপ প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া যেন আর বাধাগ্রস্ত না হয়, এ ব্যাপারে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি বিশ্লেষণ করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, তিনি তার সরকারের কৃতিত্বগুলোই তুলে ধরেছেন এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নানাভাবে দোষারোপ করেছেন। কিন্তু তার সরকারের কোনো ব্যর্থতার কথা তিনি বলেননি এবং কোনো ধরনের দুঃখ প্রকাশও করেননি। শুধু তাই নয়, তিনি অনেক সত্যকে পূর্ণভাবে প্রকাশ করেননি। এতে কি তার কোনো সাহসিকতার অভাব ছিল? নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল? তিনি বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের নিমিত্তে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কিন্তু সংকটের সূত্রপাত কোথায় এবং কেন, সেটি তিনি উল্লেখ করেননি। সে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সূত্রপাত তার কারণে এবং তার চিন্তা থেকেই উদ্ভূত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংকট নিরসনে প্রধান বিরোধী দলকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের নাম পাঠাতে বলেছেন। অনেকেই তার এ আহ্বানকে অবশ্যই সাধুবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু বিরাজমান সংকটের উৎপত্তি নিয়ে কোনো কথা না বলায় সংকট যে কাটবে না এ বিষয়েও প্রায় সবাই নিশ্চিত। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি কেন তিনি বাতিল করেছেন এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই করেননি।
তাহলে সমাধানের পথ কোথায়? গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এবং অনির্বাচিত সরকারের হাতে যেন দেশ শাসনের ভার না যায়, এসব কথা তিনি এতদিন ধরে বলে আসছিলেন। কিন্তু ১৮ তারিখের ভাষণে এ ব্যাপারে তেমন কিছুই বলেননি। অথচ তার সরকারের আমলে দেশের বহু অংশে অনির্বাচিত অনেক ব্যক্তি দ্বারা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকারের আমলে ৫ হাজার ৭৭৭টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনগুলোতে তার সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। সুতরাং তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে আশা প্রকাশ করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তিনি বিরোধীদলীয় নেতাকে আহ্বান জানিয়েছেন আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তার প্রস্তাবকে বিবেচনা করার জন্য। প্রস্তাবটি হল, ২৫ অক্টোবর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে এবং তার আগেই যেন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নামের তালিকা পাঠান, যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাবে। কিন্তু কতজনের নাম পাঠাতে হবে এরূপ কোনো সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেননি। এটা কি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত, নাকি এর মধ্যে অন্য কোনো চিন্তাভাবনা রয়েছে, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তিনি যদি সংখ্যাটি বলতেন, তা হলে নিরপেক্ষতার মানদণ্ডটি নিরূপণ করা সহজ হতো। কিন্তু তিনি তা করেননি। সুতরাং এখানেও একটা অনিশ্চয়তার ফাঁক রয়ে গেছে। যেখানে জাতিকে দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষার জন্য এ পদক্ষেপটি নিয়েছেন, সেখানে বিষয়টি অবশ্যই পরিষ্কার করা উচিত ছিল। তিনি ‘সর্বদলীয়’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য শুধু বিএনপিকে নাম দিতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলোর কী হবে- এ প্রসঙ্গেও তিনি কিছুই উল্লেখ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তার এ প্রস্তাবের কিছু অংশ মাত্র এখানে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এর বৃহৎ অংশ ঘোমটার আড়ালে চেপে রেখেছেন। সম্মানিত পাঠক, এ কলাম পড়ার পর অনেকেই হয়তো বিরোধীদলীয় নেতার মন্তব্য পেয়ে যাবেন। বস্তুত, এ লেখার শেষাংশে আমি বিরোধীদলীয় নেতার প্রস্তাবের ওপরেও বক্তব্য রেখেছি। তবে আপাতত ২৫ অক্টোবর তারিখে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল একই সঙ্গে জনসমাবেশ আহ্বান করায় যে পরিস্থিতি দাঁড়াবে বা দাঁড়ানোর কথা, সে প্রসঙ্গে মানুষের মনে যে আতংক সৃষ্টি হয়েছিল সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কিছুই বলেননি। সে সম্পর্কে মানুষকে কোনো স্বস্তির কথা শোনাননি। তিনি মহানুভবতা, উদারতা বা বিচক্ষণতা বা রাষ্ট্রনায়কোচিত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তিনি যেটি করতে পারতেন, সেটি হচ্ছে পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আহ্বান করতে পারতেন আওয়ামী লীগ যেন তাদের বিশাল জনসভা প্রত্যাহার করে নেয় বা পিছিয়ে নেয়। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে নয়, দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির সামনে ভাষণ দিয়েছেন, সেহেতু তিনি জনসভার বিষয়ে আওয়ামী লীগকে এ প্রস্তাবটি দিতে পারতেন। আমার জানা মতে, জনসভা বিএনপিই আগে আহ্বান করেছে। সুতরাং জনসভা করার জন্য বিএনপিরই হক বেশি। কিন্তু ১৯ অক্টোবর তারিখে ডিএমপির মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে তিনি পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পদক্ষেপটি অরাজনৈতিক এবং গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান কে হবেন এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কিছুই বলেননি। অতএব, আমরা ধরেই নিচ্ছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হবেন। কিন্তু ১৮ দলীয় জোট ও বিএনপির পক্ষ থেকে বহুবার বলা হয়েছে এবং এখনও বলা হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। অংশগ্রহণ কেন করবে না, তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে যাবে না, এ কথাটি বিরোধীদলীয় নেত্রী সাম্প্রতিককালে বড় জনসভাগুলোতেও বারবার বলেছেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসটি ছিল ওই সময়ে বিএনপি সরকারের শেষ সময়। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান কে হবেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ও আলাপ-আলোচনা চলছিল। তখন সাংবিধানিক রেওয়াজ মোতাবেক যে নামটি আলোচনায় উঠে এসেছিল সে নামটি ছিল তখনকার সদ্য সাবেক বিচারপতি কেএম হাসানের। কিন্তু তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী সে নামটি গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি একটি অজুহাত দাঁড় করান। সে অজুহাতটি ছিল ২০০৬ সালের ২০-২৫ বছর আগে কোনো এক সময়ে বিচারপতি কেএম হাসান বিএনপির সদস্য ছিলেন। অতএব, তার গায়ে বিএনপির গন্ধ লেগে আছে। তাই তাকে কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে মেনে নেয়া হবে না। ২০-২৫ বছর আগের কোনো এক বিএনপির সদস্যকে যদি মেনে না নিয়ে থাকেন, তাহলে আওয়ামী লীগের প্রধান হয়ে তার অধীনে অন্যদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তাব তিনি কিভাবে দেন? তিনি কি অতীত ভুলে গেছেন?
যা হোক, জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সংকট নিরসনের কোনো ইঙ্গিত ছিল না। যদিও জাতি উদগ্রীব হয়ে অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল সংকট নিরসনে ফলপ্রসূ কোনো বক্তব্য শোনার জন্য। কিন্তু জাতি হতাশ হয়েছে। কোরবানি চলে গেছে। কোরবানির ছুটি শেষ করে মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে মানুষ ঢাকায় যার যার কর্মস্থলে ফিরছে। সবাই সন্দিহান, তারা ঠিকমতো অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে কি-না। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা টেলিফোনে তাদের দুর্দশার কথা শোনান। বিক্রি কমে গেছে। আয়-রোজগার নেই। নিত্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য মানুষ খুব কমই ক্রয় করছে। কারণ অজানা এক আশংকা তাদের মধ্যে বিরাজ করছে। বাজারে বিনিয়োগ কমে গেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে বহু শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে আছে। আমার ফেসবুকে অনেক ফেসবুক-বন্ধু তাদের আর্থিক কষ্টের কথা জানাচ্ছেন। ক্ষুদ্র শিল্পপতিরা তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা নিয়ে সংকটে রয়েছেন। পোর্টাল বাংলাদেশ ডটকম নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার সুবাদে অধিকসংখ্যক মানুষের প্রতিক্রিয়া ও মনোকষ্টের কথা ক্রমশ বেশি করে জানতে পারছি। এই কলামের মাধ্যমে আমি বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন করব, গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ, সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল জাতির অস্তিত্ব এবং মানুষের শান্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এগুলো মাথায় রেখে একটি বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত নেবেন আমি সেই কামনাই করি।
বেগম খালেদা জিয়া ২১ অক্টোবর অপরাহ্নে সংবাদ সম্মেলনে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে বক্তব্যের শেষাংশে তিনি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলো বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্ববাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছিল। ওই সরকারগুলোর উপদেষ্টারা তাদের নিরপেক্ষতার জন্য সব মহল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছিলেন। ওই দুটি নির্বাচনের মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল এবং অপরটিতে বিএনপি জয়লাভ করেছিল। ওই দুটি সরকারের প্রত্যেকটিতে (প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া) ১০ জন করে উপদেষ্টা ছিলেন। ওই ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল ৫ জনের নাম প্রস্তাব করুক এবং বর্তমান বিরোধী দল ৫ জনের নাম প্রস্তাব করুক। এই ১০ জন হবেন আগামীতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের উপদেষ্টা। সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে মতৈক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের যে কোনো একজন সম্মানিত নাগরিককে ওই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনবোধে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের নির্বাচিত করা যায়; যে রকমভাবে সংসদ কর্তৃক রাষ্ট্রপতি, স্পিকার এবং মহিলা সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করা হয়, তেমনভাবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে। দেশের মানুষ অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেতে চায়। তিনি আহ্বান জানান, সবাই জনআকাক্সক্ষার প্রতি ইতিবাচকভাবে সাড়া দেবেন।
বেগম জিয়ার প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে বক্তব্য থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের দাবির মর্মটির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সন্নিবেশে সরকার গঠন করার কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনে তাদের নির্বাচিত ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করার কথাও বলেছেন। সারা দেশ থেকে সন্ধান করতে গিয়ে সময় নষ্ট ও বিতর্ক সৃষ্টি যেন না হয় তাই পরীক্ষিত ও প্রমাণিত নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার একটি সূত্র তিনি উপস্থাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেন যে, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে দেশ শাসনের ক্ষমতা দেয়া যাবে না, তাই ওই উপদেষ্টামণ্ডলীকে নির্বাচিত ব্যক্তিতে রূপান্তরের প্রস্তাবনাও আছে। অর্থাৎ পার্লামেন্ট একই সঙ্গে সার্চ কমিটি এবং ইলেকটোরাল কলেজের দায়িত্ব পালন করতে পারে। প্রয়োজন সরকারি মহলের সদিচ্ছা এবং কষ্ট করে সংবিধান সংশোধন।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক : কলাম লেখক; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
প্রধানমন্ত্রীর প্রায় ২০ মিনিটের ভাষণ নাতিদীর্ঘ ছিল। ভাষণটি গোছানো ছিল। তবে ভাষণের যে অংশটি অগোছালো মনে হয়েছে, সেটি হচ্ছে- আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যথা পুলিশ ও র্যাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শুরু করা। এর পরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাকে স্মরণ করেন। তার সরকারের গত পাঁচ বছরের সাফল্য ও কৃতিত্ব জাতির সামনে অতি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। তিনি বিদ্যুৎ সেক্টর নিয়ে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সেবা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পৌঁছে যাওয়ার কথা বলেন, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নের কথা বলেন ইত্যাদি। তিনি যে কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলেছেন সেটি জনগণের জ্ঞাতার্থে জাতির সামনে তুলে ধরছি। তিনি বলেছেন, ২০০৬ সালের আগে বিশ্বে বাংলাদেশের বদনাম এতটাই ছিল যে, তখন লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যেত। এর জন্য তিনি বিএনপিকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, তার সরকারের আমলে সেই বদনাম ঘুচিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ এতটাই সুনামের অধিকারী হয়েছে যে, মানুষ এখন শ্রদ্ধার সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করে। দ্বিতীয়ত, তিনি বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেন জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ওপর চেপে বসেছিল এবং এর জন্য বিএনপি দায়ী। এরূপ প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া যেন আর বাধাগ্রস্ত না হয়, এ ব্যাপারে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি বিশ্লেষণ করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, তিনি তার সরকারের কৃতিত্বগুলোই তুলে ধরেছেন এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নানাভাবে দোষারোপ করেছেন। কিন্তু তার সরকারের কোনো ব্যর্থতার কথা তিনি বলেননি এবং কোনো ধরনের দুঃখ প্রকাশও করেননি। শুধু তাই নয়, তিনি অনেক সত্যকে পূর্ণভাবে প্রকাশ করেননি। এতে কি তার কোনো সাহসিকতার অভাব ছিল? নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল? তিনি বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের নিমিত্তে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কিন্তু সংকটের সূত্রপাত কোথায় এবং কেন, সেটি তিনি উল্লেখ করেননি। সে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সূত্রপাত তার কারণে এবং তার চিন্তা থেকেই উদ্ভূত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংকট নিরসনে প্রধান বিরোধী দলকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের নাম পাঠাতে বলেছেন। অনেকেই তার এ আহ্বানকে অবশ্যই সাধুবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু বিরাজমান সংকটের উৎপত্তি নিয়ে কোনো কথা না বলায় সংকট যে কাটবে না এ বিষয়েও প্রায় সবাই নিশ্চিত। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি কেন তিনি বাতিল করেছেন এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই করেননি।
তাহলে সমাধানের পথ কোথায়? গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এবং অনির্বাচিত সরকারের হাতে যেন দেশ শাসনের ভার না যায়, এসব কথা তিনি এতদিন ধরে বলে আসছিলেন। কিন্তু ১৮ তারিখের ভাষণে এ ব্যাপারে তেমন কিছুই বলেননি। অথচ তার সরকারের আমলে দেশের বহু অংশে অনির্বাচিত অনেক ব্যক্তি দ্বারা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকারের আমলে ৫ হাজার ৭৭৭টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনগুলোতে তার সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। সুতরাং তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে আশা প্রকাশ করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তিনি বিরোধীদলীয় নেতাকে আহ্বান জানিয়েছেন আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তার প্রস্তাবকে বিবেচনা করার জন্য। প্রস্তাবটি হল, ২৫ অক্টোবর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে এবং তার আগেই যেন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নামের তালিকা পাঠান, যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাবে। কিন্তু কতজনের নাম পাঠাতে হবে এরূপ কোনো সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেননি। এটা কি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত, নাকি এর মধ্যে অন্য কোনো চিন্তাভাবনা রয়েছে, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তিনি যদি সংখ্যাটি বলতেন, তা হলে নিরপেক্ষতার মানদণ্ডটি নিরূপণ করা সহজ হতো। কিন্তু তিনি তা করেননি। সুতরাং এখানেও একটা অনিশ্চয়তার ফাঁক রয়ে গেছে। যেখানে জাতিকে দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষার জন্য এ পদক্ষেপটি নিয়েছেন, সেখানে বিষয়টি অবশ্যই পরিষ্কার করা উচিত ছিল। তিনি ‘সর্বদলীয়’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য শুধু বিএনপিকে নাম দিতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলোর কী হবে- এ প্রসঙ্গেও তিনি কিছুই উল্লেখ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তার এ প্রস্তাবের কিছু অংশ মাত্র এখানে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এর বৃহৎ অংশ ঘোমটার আড়ালে চেপে রেখেছেন। সম্মানিত পাঠক, এ কলাম পড়ার পর অনেকেই হয়তো বিরোধীদলীয় নেতার মন্তব্য পেয়ে যাবেন। বস্তুত, এ লেখার শেষাংশে আমি বিরোধীদলীয় নেতার প্রস্তাবের ওপরেও বক্তব্য রেখেছি। তবে আপাতত ২৫ অক্টোবর তারিখে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল একই সঙ্গে জনসমাবেশ আহ্বান করায় যে পরিস্থিতি দাঁড়াবে বা দাঁড়ানোর কথা, সে প্রসঙ্গে মানুষের মনে যে আতংক সৃষ্টি হয়েছিল সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কিছুই বলেননি। সে সম্পর্কে মানুষকে কোনো স্বস্তির কথা শোনাননি। তিনি মহানুভবতা, উদারতা বা বিচক্ষণতা বা রাষ্ট্রনায়কোচিত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তিনি যেটি করতে পারতেন, সেটি হচ্ছে পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আহ্বান করতে পারতেন আওয়ামী লীগ যেন তাদের বিশাল জনসভা প্রত্যাহার করে নেয় বা পিছিয়ে নেয়। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে নয়, দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির সামনে ভাষণ দিয়েছেন, সেহেতু তিনি জনসভার বিষয়ে আওয়ামী লীগকে এ প্রস্তাবটি দিতে পারতেন। আমার জানা মতে, জনসভা বিএনপিই আগে আহ্বান করেছে। সুতরাং জনসভা করার জন্য বিএনপিরই হক বেশি। কিন্তু ১৯ অক্টোবর তারিখে ডিএমপির মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে তিনি পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পদক্ষেপটি অরাজনৈতিক এবং গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান কে হবেন এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কিছুই বলেননি। অতএব, আমরা ধরেই নিচ্ছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হবেন। কিন্তু ১৮ দলীয় জোট ও বিএনপির পক্ষ থেকে বহুবার বলা হয়েছে এবং এখনও বলা হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। অংশগ্রহণ কেন করবে না, তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে যাবে না, এ কথাটি বিরোধীদলীয় নেত্রী সাম্প্রতিককালে বড় জনসভাগুলোতেও বারবার বলেছেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসটি ছিল ওই সময়ে বিএনপি সরকারের শেষ সময়। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান কে হবেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ও আলাপ-আলোচনা চলছিল। তখন সাংবিধানিক রেওয়াজ মোতাবেক যে নামটি আলোচনায় উঠে এসেছিল সে নামটি ছিল তখনকার সদ্য সাবেক বিচারপতি কেএম হাসানের। কিন্তু তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী সে নামটি গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি একটি অজুহাত দাঁড় করান। সে অজুহাতটি ছিল ২০০৬ সালের ২০-২৫ বছর আগে কোনো এক সময়ে বিচারপতি কেএম হাসান বিএনপির সদস্য ছিলেন। অতএব, তার গায়ে বিএনপির গন্ধ লেগে আছে। তাই তাকে কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে মেনে নেয়া হবে না। ২০-২৫ বছর আগের কোনো এক বিএনপির সদস্যকে যদি মেনে না নিয়ে থাকেন, তাহলে আওয়ামী লীগের প্রধান হয়ে তার অধীনে অন্যদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তাব তিনি কিভাবে দেন? তিনি কি অতীত ভুলে গেছেন?
যা হোক, জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সংকট নিরসনের কোনো ইঙ্গিত ছিল না। যদিও জাতি উদগ্রীব হয়ে অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল সংকট নিরসনে ফলপ্রসূ কোনো বক্তব্য শোনার জন্য। কিন্তু জাতি হতাশ হয়েছে। কোরবানি চলে গেছে। কোরবানির ছুটি শেষ করে মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে মানুষ ঢাকায় যার যার কর্মস্থলে ফিরছে। সবাই সন্দিহান, তারা ঠিকমতো অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে কি-না। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা টেলিফোনে তাদের দুর্দশার কথা শোনান। বিক্রি কমে গেছে। আয়-রোজগার নেই। নিত্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য মানুষ খুব কমই ক্রয় করছে। কারণ অজানা এক আশংকা তাদের মধ্যে বিরাজ করছে। বাজারে বিনিয়োগ কমে গেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে বহু শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে আছে। আমার ফেসবুকে অনেক ফেসবুক-বন্ধু তাদের আর্থিক কষ্টের কথা জানাচ্ছেন। ক্ষুদ্র শিল্পপতিরা তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা নিয়ে সংকটে রয়েছেন। পোর্টাল বাংলাদেশ ডটকম নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার সুবাদে অধিকসংখ্যক মানুষের প্রতিক্রিয়া ও মনোকষ্টের কথা ক্রমশ বেশি করে জানতে পারছি। এই কলামের মাধ্যমে আমি বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন করব, গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ, সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল জাতির অস্তিত্ব এবং মানুষের শান্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এগুলো মাথায় রেখে একটি বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত নেবেন আমি সেই কামনাই করি।
বেগম খালেদা জিয়া ২১ অক্টোবর অপরাহ্নে সংবাদ সম্মেলনে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে বক্তব্যের শেষাংশে তিনি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলো বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্ববাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছিল। ওই সরকারগুলোর উপদেষ্টারা তাদের নিরপেক্ষতার জন্য সব মহল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছিলেন। ওই দুটি নির্বাচনের মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল এবং অপরটিতে বিএনপি জয়লাভ করেছিল। ওই দুটি সরকারের প্রত্যেকটিতে (প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া) ১০ জন করে উপদেষ্টা ছিলেন। ওই ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল ৫ জনের নাম প্রস্তাব করুক এবং বর্তমান বিরোধী দল ৫ জনের নাম প্রস্তাব করুক। এই ১০ জন হবেন আগামীতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের উপদেষ্টা। সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে মতৈক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের যে কোনো একজন সম্মানিত নাগরিককে ওই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনবোধে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের নির্বাচিত করা যায়; যে রকমভাবে সংসদ কর্তৃক রাষ্ট্রপতি, স্পিকার এবং মহিলা সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করা হয়, তেমনভাবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে। দেশের মানুষ অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেতে চায়। তিনি আহ্বান জানান, সবাই জনআকাক্সক্ষার প্রতি ইতিবাচকভাবে সাড়া দেবেন।
বেগম জিয়ার প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে বক্তব্য থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের দাবির মর্মটির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সন্নিবেশে সরকার গঠন করার কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনে তাদের নির্বাচিত ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করার কথাও বলেছেন। সারা দেশ থেকে সন্ধান করতে গিয়ে সময় নষ্ট ও বিতর্ক সৃষ্টি যেন না হয় তাই পরীক্ষিত ও প্রমাণিত নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার একটি সূত্র তিনি উপস্থাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেন যে, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে দেশ শাসনের ক্ষমতা দেয়া যাবে না, তাই ওই উপদেষ্টামণ্ডলীকে নির্বাচিত ব্যক্তিতে রূপান্তরের প্রস্তাবনাও আছে। অর্থাৎ পার্লামেন্ট একই সঙ্গে সার্চ কমিটি এবং ইলেকটোরাল কলেজের দায়িত্ব পালন করতে পারে। প্রয়োজন সরকারি মহলের সদিচ্ছা এবং কষ্ট করে সংবিধান সংশোধন।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক : কলাম লেখক; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর (২৩ অক্টোবর ২০১৩)।