সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরত পাঠানো জঙ্গি নেতা মুঅানসারুল্লাহফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর ১৪ অনুসারী কারাগারে রয়েছেন। অপর ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে স্বজনদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পাঠানো এই ২৬ বাংলাদেশি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে জানা গেছে। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয় সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ।
তবে ঢাকার গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার কোনও তথ্য প্রমাণ পাননি। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর ভক্ত হিসেবে প্রমাণ হওয়ায় ১৪ জনকে উত্তরা পূর্ব থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়,গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুর থেকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২৬ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এছাড়া,একজন মামলার আসামি হয়ে ওই দেশের কারাগারে আটক রয়েছেন। সাজা শেষে তাকেও দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সূত্র মতে,দেশে ফেরত ব্যক্তিরা সেখানকার একটি মসজিদে নিয়মিত মিলিত হয়ে সিডিতে মুফতি রাহমানীর বক্তব্য শুনতেন। চরমপন্থী মতামত নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বইপত্রও বিনিময় করতেন তারা।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান বলেন, গত ২৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২৭ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে দেশটির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি বলেন,‘যতদূর জানা যায় তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। দেশে ফেরার পর এই ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জনকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন,আটক বাংলাদেশি নাগরিকরা সিঙ্গাপুরে কোন নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করেননি। সেখানে থেকে বাংলাদেশে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তারা।দীর্ঘদিন থেকে তারা সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দাদের নজরদারিতে ছিলেন। তারপর তাদের গ্রেফতার করা হয়। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু জানাননি।
জঙ্গি সন্দেহে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিরাঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২৬ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই ২৬ জন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছিলেন। কেউ কেউ ১৫ বছর,আবার কেউ তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত কাজ করছেন সেখানে।
মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, দেশে আসার পর তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কিছুই পাওয়া যায়নি। পরে তাদের পরিবারের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়া হলেও তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
উত্তরা পূর্ব থানার ওসি আবু বকর মিয়া জানান,ওই ১৪ জনের বিরুদ্ধে তার থানায় একটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তারা ক্ষুব্ধ ছিলো। এছাড়াও, তাদের কাছ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বিভিন্ন বই পাওয়া যায়।স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, তারা আনসারুল্লাহর অনুসারী। রাহমানীর বক্তব্য তাদের ভালো লাগতো বলে শুনতেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
কারাগারে থাকা ১৪ জন হলেন-কুমিল্লার গোলাম জিলানী (২৬),মাহমুদুল হাসান (৩০) ও নুরুল আমিন (২৬), টাঙ্গাইলের আবদুল আলীম (৩৩), আমিনুর (৩১) ও শাহ আলম (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাফর ইকবাল (২৭), কুড়িগ্রামের আলম মাহবুব (৩৪), মুন্সীগঞ্জের মোহাম্মদ জসিম (৩৩), চুয়াডাঙ্গার আবদুল আলী (৪০), ঢাকার সাইফুল ইসলাম (৩৬), চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডলার পারভেজ (৩৫), পাবনার আশরাফ আলী (২৭) ও ঝিনাইদহের আকরাম হোসেন (২৭)।