ব্যাংকগুলো এখন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ব্যাংকগুলোকে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। ডলার সংকট কাটাতে ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এতে করে ব্যাংকগুলোতে একটি অনানুষ্ঠানিক ডলারের বাজার তৈরি হয়েছে। বেশি দামে প্রবাসী আয় সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু কর্মকর্তাকে যুক্ত করা হয়েছে।
যদিও সম্প্রতি বেশি দামে ডলার কেনার দায়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মার্কিন ডলার বিক্রির অভিযোগে ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
উল্লেখ্য, গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় দেশে এসেছে গেলো সেপ্টেম্বরে। সেপ্টেম্বর মাসে বৈধ পথে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের এপ্রিলে এত কম প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। ওই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১০৯ কোটি ডলার।
জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্সের এই পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চলতি মাসের শুরুতে বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনে বেশি দামে প্রবাসী আয় আনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ মতো ডলার কেনা হচ্ছে কিনা, তার তদারকিও করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ডলার সংকটের কারণে প্রায় প্রতি দিনই রিজার্ভের পতন হচ্ছে। এ পতন ঠেকাতে সাময়িক সময়ের জন্য এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সংকট কাটাতে সামনে ডলারের দাম আরও কিছুটা বাড়ানো হবে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সায় পেয়ে কোনও কোনও ব্যাংক বেশি দাম দিয়ে প্রবাসী আয় এনেছে। এখন প্রায় এক ডজন ব্যাংক প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের দাম দিচ্ছে সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। যদি প্রবাসী ও রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ১১০ টাকা। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
মূলত বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) সময়ে সময়ে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনে প্রবাসীরা ৬৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসে প্রবাসী আয় আসার যে ধারা, এটা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে তা ১৮০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।