রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, ছোট বড় বিভিন্ন শহরের লোকালয়ে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের গ্রেফতার ও তার নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি জানিয়ে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি করা হয়েছে। রহস্যজনক এই গ্রাফিতিগুলি জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
গতকাল ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, সিলেট, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে এসব গ্রাফিতি দেখা গেছে। গ্রাফিতিগুলোতে মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত আপত্তিকর ও উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।
গ্রাফিতিগুলোতে যা লেখা ছিল:
গ্রাফিতিগুলোতে মোটা হরফে লেখা ছিল, “সমকামী, ব্যভিচারকারী, ইসলামের শত্রু, মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দাও, দিতে হবে।”
আরেকটি গ্রাফিতিতে লেখা ছিল, “নাস্তিক, কুলাঙ্গার, ব্যভিচারকারী মুনাওয়ারা মুবাশিরিনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
অন্যান্য গ্রাফিতিগুলোতেও একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করে লেখা ছিল, “নাস্তিক, কুলাঙ্গার, সমকামী, ব্যভিচারকারী মুনাওয়ারা মুবাশিরিনকে দ্রুত গ্রেফতার করে নাগরিকত্ব বাতিল কর, করতে হবে”, “মুসলমানের শত্রু, সমকামী, নাস্তিক মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের নাগরিকত্ব বাতিল করে এই বাংলাকে সমকামী মুক্ত করতে হবে” ইত্যাদি।
কে বা কারা লাগিয়েছে এসব পোস্টার?
তবে, দেশজুড়ে বিভিন্ন দেয়ালে কে বা কারা এসব গ্রাফিতি করেছে, তা এখনো জানা যায়নি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলেও এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। রাতের অন্ধকারে কে বা কারা এসব গ্রাফিতি এঁকেছে তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। কে বা কারা, কি উদ্দেশ্যে এই গ্রাফিতি লিখেছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ কি বলছে?
এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জয়নাল হক জানান, “আমরা গ্রাফিতিগুলোর ব্যাপারে অবগত আছি। কে বা কারা এসব পোস্টার লাগিয়েছে, তা খুঁজে বের করতে আমাদের একটি তদন্তকারী দল কাজ করছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য সূত্র খতিয়ে দেখছি।”
কে এই মুনাওয়ারা মুবাশিরিন?
মুনাওয়ারা মুবাশিরিন অনলাইন জগতে একজন পরিচিত মুখ। তিনি একজন নারীবাদী ব্লগার এবং স্পষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার নিয়েও লেখালেখি করেন। নারীদের অধিকার, সমকামীদের অধিকার, ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার ব্যক্তিগত ব্লগ ও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি করেন তিনি। স্পষ্টভাষী ও স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য তিনি অনেকের কাছে যেমন প্রশংসিত, আবার অনেকের কাছে বিতর্কিতও বটে।
এই গ্রাফিতির ঘটনা দেশের মুক্তচিন্তার পরিবেশ ও বাক স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন অনেকে। কে বা কারা এই গ্রাফিতির পেছনে রয়েছে তা দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।