Ajker Digonto
বুধবার , ২৩ অক্টোবর ২০১৩ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. অর্থনীতি
  4. আইন- আদালত
  5. আইন-আদালত
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আলোচিত মামলা
  8. খুলনা
  9. খেলা
  10. খেলাধুলা
  11. চট্টগ্রাম
  12. চট্টগ্রাম বিভাগ
  13. জাতীয়
  14. ঢাকা
  15. তথ্য প্রযুক্তি

যুগে যুগে অস্থিরতার দায়-দায়িত্ব এবং এই মুহূর্তের সংকট উত্তরণ— মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

প্রতিবেদক
Staff Reporter
অক্টোবর ২৩, ২০১৩ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
যুগে যুগে অস্থিরতার দায়-দায়িত্ব এবং এই মুহূর্তের সংকট উত্তরণ— মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
আজ থেকে নিয়ে পিছনের দিকে দুই তিন মাস সময়। এইরূপ আতংকিত, উৎকণ্ঠিত এবং অনিশ্চিত সময় বাংলাদেশের মানুষ অতীতে অন্য কোনো সময় পার করেছে কিনা সন্দেহ। আমার স্মৃতি বলছে, এইরূপ সময় অতীতে কোনোদিন হয়নি। যারা পত্রিকার এই কলাম পড়ছেন তাদের বয়স, উদাহরণস্বরূপ, ১৮ থেকে ৭০ হতে পারে। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে নভেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত ১১ মাসের সেই শংকিত দিনগুলোর কথা আজকের ১৮ বা ২০ বা ৩০ বছর বয়সি পাঠকের পে উপলব্ধি করা অবশ্যই কষ্টকর কারণ, সেই সময় তার জন্মই হয়নি। ১৯৮১ সালের মে মাসের ৩০ তারিখ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিদ্রোহী সেনা সদস্যদের হাতে নিহত হওয়ার পরবর্র্তীতে, ২৪ মার্চ ১৯৮২ তারিখে সামরিক শাসন জারির আগে পর্যন্ত কয়েক মাসের অস্থির সময়ের কথা এই যুবকদের মনে থাকার কথা নয়। প্রেসিডেন্ট এরশাদের ৯ বছরের শাসনকাল মসৃণ ছিল না। সেই শাসনামলের শেষ দুই আড়াই বছর অশান্ত ছিল। শেষ তিন মাস উত্তাল ছিল। শেষ সাত দিন অকল্পনীয়ভাবে উত্তপ্ত ছিল। আজকে যারা মধ্য বয়সি, তাদের নিকট সেই ১৯৮৯-৯০ সালের দিনগুলোর স্মৃতি এখনও অস্পষ্ট হওয়ার কথা নয়। ১৯৯৫ সালের শেষাংশ থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়টা রাজনৈতিকভাবে ভীষণ অস্থির এবং সারাদেশের রাজপথ উত্তপ্ত ছিল। আজকের তরুণ যাদের বয়স ৩০-৩৫ বা তার থেকে একটু বেশি, তারা নিশ্চয় সেই দিনগুলোর কথা ভুলেননি। তিনটা সময়ের কথা এইজন্য বললাম যেন যাদের দ্বারাই সম্ভব হয় তারা এটা মিলিয়ে নিতে পারেন। একটু একটু ব্যাখ্যাও দিব যেন ঐ সময়ের সঙ্গে অপরিচিত পাঠক ইতিহাসের আলোকে দায়-দায়িত্ব নির্ধারন করতে পারেন।
নবজাত বাংলাদেশের প্রথম অস্থিরতা।
১৯৭৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের কথা উল্লেখ করেছি। মানুষ শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে সময় কাটিয়েছিল। কেন? ১৯৭২ এর জানুয়ারির ১০ তারিখ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ফেরত এসেছিলেন। সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সরকারি দল ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মুক্তিযোদ্ধাগণ বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল ও একনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেই সংহতিতে ফাটল ধরে। সংবিধান রচনার সময়, অল্প কয়েকজন হলেও, কয়েকজন সংসদ সদস্য সংবিধানের কয়েকটি বক্তব্যে কঠোর দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। ১৯৭২ এর অক্টোবরে প্রথম বিরোধী দল জন্মগ্রহণ করেছিল, নাম জাসদ। জাসদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামে। ১৯৭২ সালে সকল প্রকারের শিল্প জাতীয়করণ করা হয় এবং সেই জাতীয়করণ করা শিল্পগুলো লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংস হয়। কারণ, জাতীয়করণকৃত শিল্পগুলো পরিচালনার জন্য আন্তরিকতা ও অভিজ্ঞতার দারুন অভাব ছিল। ১৯৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বাইরে এবং ভেতরে চোরাচালান মহামারি রূপ নেয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভি হয় এবং অগণিত মানুষ মারা যায়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে, বাংলাদেশের সংবিধানে মারাত্মক রকমের সংশোধনী আনা হয় অর্থাৎ বহুদলীয় গণতন্ত্রের বদলে একদলীয় গণতন্ত্র কায়েম করা হয়। সামরিক বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তাগণ ও পেশাজীবীগণকে একমাত্র রাজনৈতিক দলের সদস্য বানিয়ে পুরো সমাজকে একদলীয় রাজনীতিকরণ করা হয়। ১৯৭৩-৭৪-৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের তরুণ সদস্যগণের কর্মকাণ্ড বিতর্কিত হতে থাকে। আইন-শৃংখলা রার নিমিত্তে সৃষ্টি করা জাতীয় রবিাহিনী নামক একটি নতুন বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছিল, যারা যে কোনো কারণেই হোক না কেন, জনমনে আতংকের কারণ হয়, নিপীড়নকারী হিসেবে পরিচিত হয়। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভৌত কাঠামো দুর্বল অর্থনীতি ইত্যাদি বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দুর্নীতি এবং আংশিকভাবে আন্তর্জাতিক অসহযোগিতা। ফলশ্র“তিতে বঙ্গবন্ধু তার শত আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও সাফল্যের সঙ্গে দেশ শাসন করতে পারেননি। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি অংশ বিদ্রোহ বা ক্যু সাধন করে। ঐ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু নিহত হন। আড়াই মাস পর, ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখে সেনাবাহিনীর আরেকটি অংশ ১৫ আগস্টের বিদ্রোহীকারীদের বিরুদ্ধে আরেকটি বিদ্রোহ বা ক্যু সাধন করে। ৩ নভেম্বরের বিদ্রোহীগণ জেনারেল জিয়াকে গ্রেফতার করেছিলেন। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখে সৈনিকগণ একটি বিপ্লব সাধন করে এবং জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করে। জেনারেল জিয়ার চেষ্টায় এবং সাহসিকতায় ধীরে ধীরে স্থিরতা ফিরে আসে।
জিয়াউর রহমান হত্যা।
১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান হন। তিনি লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে সেনাবাহিনী প্রধান বানান। ১৯৮০ সাল থেকে সেনাবাহিনী প্রধান ইশারা-ইঙ্গিতে তার রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ করতে থাকেন তথা ঐ সময়ের মতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে তার সমালোচনা প্রকাশ করতে থাকেন। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধা এবং অমুক্তিযোদ্ধা বা পাকিস্তান ফেরত অফিসারগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছিল। জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর সরকারে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের সংশ্লেষের কারণে তাঁর সমালোচনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এইরূপ প্রোপটে ৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর বীর উত্তম এর নেতৃত্বে একদল সেনা অফিসার এবং তাদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ডিভিশনের একটি অংশ বিদ্রোহ বা ক্যু সাধন করে। জেনারেল মঞ্জুর মনে করতেন যে, দ জ্যেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা অফিসার হিসেবে, তিনিই সেনাপ্রধান হওয়া উচিত এবং অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা অফিসারগণ অধিকতর মূল্যায়িত হওয়া উচিত। সেই বিদ্রোহের প্রক্রিয়ায় জেনারেল জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিহত হন। বিদ্রোহকারীদের বিচার হয়। অনেকের ফাঁসি হয় অনেকের জেল হয়। বিএনপি সরকার চালাতে থাকে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পরো ও প্রত্যভাবে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলে। চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকার অদ, দেশ বিপদে আছে এইরূপ অভিযোগে ২৪ মার্চ ১৯৮৪ তারিখে, তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এরশাদ একটি ক্যু-দ্য-তা বা রক্তপাতহীন সামরিক বিপ্লব সাধন করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র মতা দখল করেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছিল।
জেনারেল এরশাদের শাসনকে বৈধতা ও আওয়ামী লীগ।
সামরিক শাসক লে. জেনারেল এরশাদ নিজেকে এবং তার শাসনকে রাজনৈতিক শাসনে পরিণত করতে প্রচেষ্টা নেন। জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করেন। সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজন ছিল। একদলীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না এইজন্য সব অথবা যে কোনো গুরত্বপূর্ণ বড় দল অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল। অপরদিকে, দেশের সকল বড় রাজনৈতিক দলগুলো এরশাদ বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা করে ফেলেছিলেন ইতোমধ্যেই। সেখান থেকে, কোনো না কোনো দলকে বিচ্যুত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর কাজটি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদের জন্য দুরূহ ছিল। কিন্তু তিনি সাফল্যের সঙ্গে সেই কাজটি করেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একমত হয়েছিল যে, তারা কেউই এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনে যাবে না কারণ, নির্বাচনে গেলেই জাতীয় পার্টি এবং এরশাদের সামরিক সরকার বৈধতা পাবে। এইরূপ পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই, তৎকালীন আওয়ামী লীগ, নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সম্মতি দেয়। ১৯৮৬ সালে সেই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হয়। সামরিক শাসন সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেয় এবং জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক সহযোগিতা ছিল আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে।

এরশাদ সরকারের পতন এবং সেনাবাহিনী।
১৮ অক্টোবর ১৯৯০ সাল থেকে এরশাদ সরকারের পতনের ল্েয, আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তখন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে নিয়োজিত যথা সামরিক অপারেশনস পরিদপ্তর এর পরিচালক বা ডাইরেক্টর অফ মিলিটারি অপারেশনস। ১৮ অক্টোবর ১৯৯০ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে অবনতিশীল আইন-শৃখংলা পরিস্থিতিতে এবং রাষ্ট্রপতিকে সহায়তার নিমিত্তে, সেনাবাহিনী ক্রমান্বয়ে নিয়োজিত হচ্ছিল। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি স্থানে, সেনা সদস্যগণ জনগণের আক্রমণের শিকার হয়। জনগণ কর্তৃক সেনা সদস্যকে আক্রমণের কারণ ছিল, অনেকটা এরকম, “তোমরা কেন স্বৈরশাসক এরশাদকে সমর্থন দিয়ে এখনও টিকিয়ে রাখছ”? এইরূপ পরিস্থিতিতে নভেম্বর ১৯৯০ এর একদম শেষ দিকে ঢাকা মহানগরে হঠাৎ করেই দারুন উত্তেজিত আন্দোলন শুরু হয়। সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়। সেনাবাহিনীকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল যে, তারা রাষ্ট্রপতি এরশাদকে মতায় টিকিয়ে রাখার জন্য আর কতদিন নিবেদিত থাকবেন? তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল নুরুদ্দীন খান এবং তৎকালীন চীফ অফ দি জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আব্দুস সালাম অত্যন্ত কঠোর এবং স্পর্শকাতর অনুঘটকীয় ভূমিকা পালন করেন। সেনা কর্তৃপ নিরব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, সেনাবাহিনী নিজেদেরকে বিতর্কিত করবে না ও জনবিরোধী করবে না। প্রত্য স্বাী এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বহুলাংশে সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তি হিসেবে আমি আমার মূল্যায়ন আমার লেখা সর্বশেষ বই ‘মিশ্র কথন’-এ লিপিবদ্ধ করেছি ইতিহাসের স্বার্থে। অনন্যা কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তকটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আমি জাতীয় অঙ্গনে নিবেদন করেছি। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার স্বার্থে ঐ আমলের সেনাবাহিনীই পরবর্তী তিন মাস অকান্ত পরিশ্রম করে এবং বাংলাদেশে পুনরায় নির্বাচিত সরকার ফিরে আসে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নবযাত্রায় সরকার গঠন করে বিএনপি।
তত্ত্বাবধায় সরকার দাবিতে আওয়ামী আন্দোলন।
১৯৯৪ সালের শেষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উত্থাপিত হতে থাকে। ১৯৯৫ সালে দাবি জোরালো হয়। আন্দোলন কঠোর হয়। ১৯৯৬ সালের শুরুটা জ্বলন্ত ছিল। আন্দোলনকারীগণ ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামী। সরকারে ছিল বিএনপি। সংসদে উপযুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায়, বিএনপি ইচ্ছা করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধানকে সংশোধন করতে পারছিল না। তাই ১৫ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৬ তারিখে নতুন করে বিএনপি সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ অসহযোগিতা করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পর, বিএনপি মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সংবিধান সংশোধন করে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটায়। শেষ সপ্তাহের শেষ দিকে, বিএনপি সরকার মতা ছেড়ে দেয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু একটি অঘটন ঘটে। তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক শিবির অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতায় অথবা সংশ্লিষ্টতাবিহীন, ১৯৯৬ সালের মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে, তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধানের নেতৃত্বে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অংশ এমন কিছু কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে যেগুলোকে বিদ্রোহমূলক বা সরকার উৎখাতমূলক বলা যায়। সেনাবাহিনীর দুইটি অংশ প্রায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। যাহোক, বিদ্রোহী অংশ শান্ত হয় এবং সেনাবাহিনীতে ও দেশে শান্তি ফিরে আসে। ১০ জুন ১৯৯৬ তারিখে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থান পায়। তারা সরকার গঠন করে। তারা মে ১৯৯৬ এর বিদ্রোহের হোতাদের প্রতি নমনীয় ভাব দেখান।
২০০৬ এর তাণ্ডব।
২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি সরকরের মেয়াদ শেষ হয়। ২৬-২৭ অক্টোবর ঢাকা মহানগরে যেই রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়েছিল সেই স্মৃতি এখন পর্যন্ত বিশেষ কেউই ভুলেনি। তার দায় দায়িত্ব একাধিক রাজনৈতিক দলের ওপর পড়ে। কেউ প্রোপট সৃষ্টি করেছেন, কেউ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করেছেন। তিন মাস পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এর নেতৃত্বে, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উৎখাত করা হয় এবং নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সৃষ্টি করা হয়। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। প্রচুর সংখ্যক সেনা অফিসার জরুরি অবস্থা ও একাধিক সংস্কারমূলক ও জনকল্যাণমূলক প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে জড়িত হয়ে পড়েন। সাধারণভাবে রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী মহল ১/১১ কে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, তাদের আন্দোলনের ফসলই হল ১/১১ এর সরকার। একজন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে এই প্রসঙ্গে আমি আরও মন্তব্য করতে পারি তবে কলামকে ছোট রাখার জন্য আজকে করছি না।
উৎকণ্ঠিত কিন্তু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ বর্তমান।
এখন অক্টোবর ২০১৩। অক্টোবর ২০০৬ এর কথা উপরের অনুচ্ছেদেই বললাম। এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে। সাংবিধানিক সংকট নিয়ে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন যে, তিনি বর্তমান সংবিধানের বাইরে যাবেন না এবং সংবিধানের ভেতরে থেকেই আগামী নির্বাচন করবেন বা করাবেন। অপরপে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নিজস্ব সুবিধার জন্যই এবং আগামী নির্বাচনে যেন জিততে পারে ঐ অন্তর্নিহিত ল্যকে সামনে রেখে সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে। বিরোধী দলের মতে, নিরপে নির্দলীয় সরকার ব্যতিত, নির্বাচনকালে সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। অতএব, বিরোধী দল কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এই মুহূর্তের সংকট কঠিন। সংকটের শুরু ২০১১ সালের জুন মাসে। সংকটের উৎপত্তি ২০১১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের পার্লামেন্ট কর্তৃক পঞ্চদশ সংশোধনী আনায়ন করা। সংকট সৃষ্টিতে বর্তমান বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের কোনো অবদান নেই। তার পরেও বিরোধী শিবির যথাসম্ভব শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে, সরকারকে বুঝাতে চেষ্টা করেছে যে, তাদের দাবি ন্যায্য এবং বাস্তবায়ন করা হোক। বিরোধী শিবিরের দাবিটা এমনই একটা দাবি যেটা মূলত ১৯৯৪-৯৫-৯৬ সালে বর্তমান সরকারি দলেরই দাবি ছিল। এইরূপ প্রোপটে মানুষ যখন উৎকণ্ঠিত, আতংকিত, তখন ১৮ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এবং একটি প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকার। প্রস্তাবটি অত্যন্ত স্বল্প কথার এবং অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট। অতএব সেটার উপর মন্তব্য করাও কঠিন। ২১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপে সরকারের রূপরেখা দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে আমি উপস্থিত ছিলাম। তাঁর বক্তব্যের বিবরণ এবং মূল্যায়ন টেলিভিশনে আসছে এবং আরও আসবে; পত্রিকায় আসছে। বাংলাদেশে এখন অনলাইন নিউজ পোর্টাল একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমে রূপান্তরিত হচ্ছে। পোর্টাল বাংলাদেশ ডটকম নামক একটি নতুন নিউজ পোর্টাল এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় আমিও অনেক প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি প্রত্যভাবে।

বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলো বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসীর সামনে বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছিল। ঐ সরকারগুলোর উদেষ্টাগণ তাঁদের নিরপেতার জন্য সকল মহল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছিলেন। ঐ দুইটি নির্বাচনের মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল এবং অপরটিতে বিএনপি জয়লাভ করেছিল। ঐ দুইটি সরকারের প্রত্যেকটিতে (প্রধান উপদেষ্টা ব্যতিত) ১০ জন করে উপদেষ্টা ছিলেন। ঐ ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল ৫ জনের নাম প্রস্তাব করুক এবং বর্তমান বিরোধী দল ৫ জনের নাম প্রস্তাব করুক। এই ১০ জন হবেন আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকালীন নিরপে নির্দলীয় সরকারের উপদেষ্টা। সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে মতৈক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের যে কোনো একজন সম্মানিত নাগরিককে ঐ নির্বাচনকালীন নিরপে নির্দলীয় অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই প্রয়োজনবোধে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাগণকে নির্বাচিত করা যায়; যেরকমভাবে সংসদ কর্তৃক রাষ্ট্রপতি, স্পীকার এবং মহিলা সংসদ সদস্যগণকে নির্বাচিত করা হয়, ঐরকমভাবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য অপো করছে। দেশের মানুষ অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেতে চায়। তিনি আহ্বান জানান যে, সকলেই জনআকাক্সার প্রতি ইতিবাচকভাবে সাড়া দিবেন।
বেগম জিয়ার প্রস্তাবের পে এবং বিপে বক্তব্য থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি বিএনপি এবং ১৮ দলীয় জোটের দাবির মর্মটির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। নিরপে ব্যক্তিদের সন্নিবেশে সরকার গঠন করার কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনে তাদেরকে নির্বাচিত ব্যক্তিকে রূপান্তরিত করার কথাও বলেছেন। সারা বাংলাদেশ থেকে তল্লাশী করতে গিয়ে সময় নষ্ট এবং বিতর্ক সৃষ্টি যেন না হয় তাই, পরীতি ও প্রমাণিত নিরপে ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার একটি সূত্র তিনি উপস্থাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেন যে, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে দেশ শাসনের মতা দেয়া যাবে না, তাই ঐ সকল উপদেষ্টামণ্ডলীকে নির্বাচিত ব্যক্তিতে রূপান্তরের প্রস্তাবনাও আছে।

সর্বশেষ - অন্যান্য